বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ভিটামিন ডি-এর অভাব একটি সাধারণ সমস্যা। সার্বিক সুস্থতার জন্য শরীরে এই ভিটামিন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা অপরিহার্য। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন ডি সেবন করলে তা মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে। যারা সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ভিটামিন ডি খান তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

ভিটামিন ডি শরীরকে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে। সঙ্গে হাড়, পেশি ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু যখন অতিরিক্ত মাত্রায় এটি নেওয়া হয়, তখন তা দেহে জমে গিয়ে বিভিন্ন অস্বাভাবিক ফলাফল ডেকে আনতে পারে। অতিরিক্ত ভিটামিন ডি খেলে শরীরের কী কী ক্ষতি হতে পারে, জেনে নিন-

১. হজমতন্ত্রের সমস্যা: ভিটামিন ডি অতিরিক্ত হলে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এই অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম হজমতন্ত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এই অবস্থায় মানুষ বমিভাব, বমি, খিদে না পাওয়ার মতো সমস্যায় পড়তে পারেন। 

আরও পড়ুনঃ রান্নাঘরের এই সব মশলা দুর্দান্ত পেইনকিলার, নিয়মিত খেলে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই পাবেন সুফল! কোন ব্যথায় কোনটি খাবেন?

২. পেট ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়াঃ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম হজমতন্ত্রে প্রভাব ফেলে। ফলে পেট ব্যথা, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য বা এমনকি ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় একটি শিশু (১৮ মাস বয়সী) অতিরিক্ত ডোজ ভিটামিন ডি নিলে ডায়রিয়া ও পেট ব্যথা হয় এবং সাপ্লিমেন্ট বন্ধ করলে সেই সমস্যাগুলো কমে আসে। এই ধরনের উপসর্গ সাধারণত হাইপারক্যালসেমিয়া (রক্তে অত্যধিক ক্যালসিয়াম)-এর ইঙ্গিত হতে পারে। যা সময়মতো শনাক্ত না হলে আরও বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

৩. রক্তে অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামঃ ভিটামিন ডি সাধারণত ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়ক হলেও, অতিরিক্ত মাত্রায় তা রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি করতে পারে। যার ফলে বমিভাব ও বমি, ক্লান্তি ও ঝিমুনিভাব, মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত প্রস্রাব ও তৃষ্ণার্ত অনুভূতি, বিভ্রান্তি হতে পারে। এই অবস্থায় হৃদপিণ্ড, রক্তনালী ও কিডনির ওপর নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে।

৪. হাড় এবং অস্থির গুণগত ক্ষতিঃ একদিকে, ভিটামিন ডি হাড়ের জন্য অত্যাবশ্যক, অন্যদিকে অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে হাড় নিজের ক্ষতি করতে পারে। ক্যালসিয়াম বেশি হলে ভিটামিন কে২-এর কার্যকারিতা বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে, যা ক্যালসিয়ামকে হাড়ে নির্দিষ্টভাবে পৌঁছাতে সহায়তা করে। 
এর ফলে, ক্যালসিয়াম রক্তনালীর দিকে যেতে পারে এবং হাড়ে কম জমা কম হয়-যা দীর্ঘমেয়াদে অস্টিওপোরোসিস বা হাড় দুর্বলতার ঝুঁকি বাড়ায়।

৫. কিডনির ক্ষতিঃ রক্তে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম কিডনির ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত ভিটামিন ডি সেবন কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে, কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে, এমনকি কিডনি ফেইলিওর পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। বিশেষভাবে যারা দীর্ঘ সময়ের জন্য বেশি ডোজের ভিটামিন ডি নিচ্ছেন, তাদের জন্য রক্তের ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে সঠিক ডোজের ভিটামিন ডি খান। যেসব সাপ্লিমেন্ট ব্র্যান্ড পরিচিত ও পরীক্ষিত, সেগুলি কিনুন। ভুল লেবেল বা অতিরিক্ত ক্ষমতাযুক্ত সাপ্লিমেন্ট অনেক বিপদের কারণ হতে পারে।নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করুন। ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম মাত্রা নির্ধারণ করার জন্য নিয়মিত পরীক্ষা করানো জরুরি। বমিভাব, ক্লান্তি, পেট ব্যথা, অতিরিক্ত প্রস্রাব বা হাড়-ব্যথার কোনও উপসর্গ দেখা দিলে সাপ্লিমেন্ট বন্ধ করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শুধুমাত্র ভিটামিন ডি নয়, হাড় ও অন্যান্য অঙ্গের স্বাভাবিক কাজের জন্যও শরীরের ক্যালসিয়াম, ভিটামিন কে২ ও অন্যান্য খনিজেরও ভারসাম্য রাখতে হবে।