আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের তালিকায় ভেসে উঠল এক অপরূপ সুন্দরীর মুখ, কিংবা কোনও বিদেশি নায়কের মতো ঝকঝকে চেহারা। কৌতূহলবশত প্রোফাইলে ঢুকতেই হয়তো খটকা লাগল। সামান্য খোঁজ নিতেই বোঝা গেল, প্রোফাইলটি আসলে নকল। সমাজমাধ্যমের দেওয়ালে এই ‘ফেক’ বা ‘নকল’ প্রোফাইলের আনাগোনা এক পরিচিত ঘটনা। নিরীহ মজা থেকে শুরু করে ভয়ঙ্কর অপরাধ- সবকিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে এই নকল পরিচয়ের জাল। কিন্তু প্রশ্ন হল, মানুষ কেন এই মুখোশের আশ্রয় নেয়? এর নেপথ্যে কাজ করে কোন মনস্তত্ত্ব?

 

মনোবিদ ও সমাজতত্ত্ববিদরা জানাচ্ছেন, ফেক প্রোফাইল তৈরি করার প্রবণতা আসলে এক জটিল মানসিক অবস্থার প্রতিফলন। এর নেপথ্যে থাকতে পারে একাধিক কারণ।

১। হীনম্মন্যতা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব

বিশেষজ্ঞদের মতে, এটিই সবচেয়ে বড় কারণ। যাঁরা নিজেদের বাস্তব জীবনের চেহারা, গায়ের রং, সামাজিক বা আর্থিক অবস্থা নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগেন, তাঁরাই মূলত একটি কাল্পনিক ‘নিখুঁত’ পরিচয় তৈরি করেন। এই নকল প্রোফাইলের মাধ্যমে তাঁরা এমন এক জীবন তুলে ধরেন, যা তাঁরা বাস্তবে যাপন করতে চান। সেই প্রোফাইলে পাওয়া ‘লাইক’ বা ‘কমেন্ট’ তাঁদের আত্মবিশ্বাসের সাময়িক খোরাক জোগায়, যা তাঁরা বাস্তব জীবনে পান না।

 

২। অবদমিত ইচ্ছাপূরণ

বাস্তব জীবনে অন্তর্মুখী বা লাজুক প্রকৃতির কোনও ব্যক্তি হয়তো ভার্চুয়াল জগতে হয়ে উঠতে চান বেপরোয়া এবং আমুদে। আবার সমাজের চোখে ‘ভাল’ সেজে থাকা কেউ হয়তো নকল পরিচয়ের আড়ালে নিজের অন্ধকার দিকটি প্রকাশ করতে চান। এই ফেক প্রোফাইল তাঁদের কাছে এক মুক্তির পরিসর, যেখানে সামাজিক বিধিনিষেধের ভয় ছাড়া নিজের অবদমিত ইচ্ছা বা সত্তাকে প্রকাশ করা যায়।

 

৩। প্রতিহিংসা ও সাইবার বুলিং

নকল পরিচয়ের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যবহার হয় এখানেই। পরিচয় গোপন থাকার সুযোগ নিয়ে কাউকে অপমান করা, হুমকি দেওয়া, গুজব ছড়ানো বা পরিকল্পিতভাবে হেনস্থা করা অনেক সহজ হয়ে যায়। ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে বা নিছক বিকৃত আনন্দ পেতে অনেকেই ফেক প্রোফাইলের সাহায্য নেন।

৪। কৌতূহল এবং পর্যবেক্ষণ

প্রাক্তন সঙ্গী বা সঙ্গিনীর জীবনে কী ঘটছে, তা জানার কৌতূহল, কিংবা বন্ধুদের গতিবিধির উপর গোপনে নজর রাখার জন্যও অনেকে ফেক প্রোফাইল তৈরি করেন। এই ধরনের ডিজিটাল উঁকিঝুঁকি তাঁদের কাছে একধরণের উত্তেজনার উৎস।

সাইবার মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, ফেক প্রোফাইল হল বাস্তব জীবন ও আকাঙ্ক্ষার মধ্যেকার ফারাক পূরণের একটি ডিজিটাল মাধ্যম। যে ব্যক্তি বাস্তবে যা হতে পারেন না, ভার্চুয়াল জগতে সেই সত্তা তৈরি করে তিনি এক ধরনের মানসিক তৃপ্তি লাভ করেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই পলায়নপর মনোবৃত্তি বিপজ্জনক এবং অপরাধমূলক দিকে মোড় নেয়।

 

ফেক প্রোফাইলের জগৎ একাধারে যেমন মানসিক জটিলতার প্রকাশ, তেমনই অপরাধের আঁতুড়ঘর। তাই সমাজমাধ্যমে বিচরণ করার সময় অচেনা প্রোফাইলের বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং নিজের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখাই বিচক্ষণতার পরিচয়। কারণ মুখোশের আড়ালের মানুষটি বন্ধু না শত্রু, তা বোঝা প্রায়শই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।