আজকাল ওয়েবডেস্ক: সকালের নাস্তা থেকে সন্ধ্যার পাস্তা, অনেকেই দিনরাত পনির খান। বাঙালির রান্নাঘরে ছানার আগমন বেশ প্রাচীন হলেও পনিরের আনাগোনা খুব বেশি দিনের নয়। কিন্তু কম সময়েই একেবারে জাঁকিয়ে বসেছে এই খাবার। স্যান্ডউইচ, পিৎজা, পাস্তা থেকে শুরু করে ঘরোয়া চাউমিন বা সাধারণ টোস্ট কিংবা নিদেনপক্ষে পনিরের ঝোল- সর্বত্র তার অবাধ বিচরণ।
বিশেষ করে যাঁরা নিরামিষ খাবার খেতে পছন্দ করেন, তাঁদের বাড়িতে শিশুদের টিফিন হোক বা বড়দের সান্ধ্যকালীন জমায়েত, পনির ছাড়া যেন সব আয়োজনই অসম্পূর্ণ। অনেকেই ভাবেন দুধ থেকে তৈরি এই খাবার পুষ্টির ভান্ডার। কিন্তু পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, পনিরপ্রীতি যদি মাত্রা ছাড়ায়, তবে হিতে বিপরীত হতে পারে। অজান্তেই শরীরে বাসা বাঁধতে পারে একাধিক জটিল রোগ।
 
 আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে 
হৃদরোগের ঝুঁকি: পনির ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস হলেও, এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণও থাকে অনেকটাই বেশি। বিশেষ করে প্রসেসড পনিরে এই ফ্যাটের মাত্রা মারাত্মক। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত অতিরিক্ত পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরে প্রবেশ করলে রক্তে ‘খারাপ কোলেস্টেরল’ বা এলডিএল-এর মাত্রা বেড়ে যায়। এই কোলেস্টেরল ধমনীর গায়ে জমে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। এর থেকে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতা: পনির উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার। সামান্য পরিমাণ পনিরেই প্রচুর ক্যালোরি থাকে। শরীরচর্চা বা কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে সেই ক্যালোরি খরচ না হলে, তা মেদ হিসেবে শরীরে জমতে শুরু করে। দীর্ঘ দিন ধরে এই ঘটনা ঘটতে থাকলে ওজন বৃদ্ধি পায় এবং স্থূলতার মতো সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত স্থূল শরীর ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপের মতো একাধিক রোগের আঁতুড়ঘর।
হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য: অনেকেরই ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স বা দুগ্ধজাত খাবার হজম করার সমস্যা থাকে। পনিরে ল্যাকটোজের পরিমাণ দুধের চেয়ে কম হলেও, বেশি পরিমাণে খেলে গ্যাস, পেট ফাঁপা, ডায়ারিয়ার মতো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এছাড়া পনিরে ফাইবারের পরিমাণ প্রায় শূন্য। খাদ্যতালিকায় ফাইবারযুক্ত খাবারের বদলে যদি পনিরের পরিমাণ বেড়ে যায়, তবে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা: স্বাদ বাড়ানোর জন্য এবং পনিরকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য করে তোলার জন্য অনেক সময় বাজারজাত পনিরে প্রচুর পরিমাণে লবণ বা সোডিয়াম যোগ করা হয়। এই অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সোডিয়াম বেড়ে গেলে শরীর জল ধরে রাখতে শুরু করে, যার ফলে রক্তনালীর উপর চাপ বাড়ে এবং রক্তচাপ বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে যেতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, উচ্চ রক্তচাপ হল একটি ‘নীরব ঘাতক’, যা কিডনির সমস্যা থেকে শুরু করে হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
 
 আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে 
অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: পনিরের তুতো ভাই চিজও কিন্তু অতিরিক্ত খেলে বিপদ ডেকে আনতে পারে। পুরোনো পনির এবং চিজে ‘টাইরামিন’ নামক একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। যাঁদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই টাইরামিন মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। এছাড়া, কিছু গবেষণায় অতিরিক্ত দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণের সঙ্গে ব্রণ বা অ্যাকনের মতো ত্বকের সমস্যারও যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, পনিরকে খাদ্যতালিকা থেকে পুরোপুরি বাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে পরিমিতি বোধ থাকা জরুরি। প্রক্রিয়াজাত পনিরের বদলে ছানা বা টোফুর মতো স্বল্প-ফ্যাটযুক্ত খাবার বেছে নেওয়া যেতে পারে। খাওয়ার সময়ে পরিমাণের দিকে নজর রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ রসনাতৃপ্তির চেয়ে স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা নিঃসন্দেহে অনেক বেশি জরুরি।
