স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা মানবদেহে থাকা এক সাধারণ গাট ব্যাকটেরিয়া ফোকেইকোলা ভালগাটাসকে জেনেটিক পদ্ধতিতে এমনভাবে পরিবর্তন করেছেন, যাতে এটি নিরাপদে ভেঙে ফেলতে পারে অক্সালেটকে—যা কিডনিতে পাথর হওয়ার মূল কারণ। সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত এবং সায়েন্স নিউজ টুডে–তে রিপোর্ট করা এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এই পরিবর্তিত ব্যাকটেরিয়া সরাসরি অন্ত্রে অক্সালেট ভেঙে ফেলে। ফলে অক্সালেট কিডনিতে পৌঁছতে পারে না এবং যন্ত্রণাদায়ক স্ফটিক বা কিডনি স্টোন তৈরি হয় না।
এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এর অন্তর্নিহিত সুরক্ষা ব্যবস্থা। পরিবর্তিত ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকতে নির্ভর করে পর্ফিরান নামের এক বিশেষ পুষ্টির উপর, যা সাগরের শৈবালে পাওয়া যায়। মানুষ পর্ফিরান হজম করতে পারে না, কিন্তু এই ব্যাকটেরিয়া পারে। ফলে গবেষকরা খাদ্যে পর্ফিরান দেওয়া বা না-দেওয়ার মাধ্যমে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্ষমতা। যদি পর্ফিরান না থাকে, তবে ব্যাকটেরিয়া স্বাভাবিকভাবেই মারা যায়।
ইঁদুরের উপর ল্যাব পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে প্রস্রাবে অক্সালেটের মাত্রা ৪৭% কমেছে। এমনকি গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারির পর তৈরি হওয়া হাইপারঅক্সালুরিয়ার মতো মানব-সদৃশ মডেলেও ব্যাকটেরিয়া পুরোপুরি রুখে দিয়েছে অক্সালেট বৃদ্ধিকে। সুস্থ মানুষের উপর প্রাথমিক পরীক্ষাতেও আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া গেছে। তবে চিকিৎসায় প্রয়োগের আগে আরও বিস্তৃত গবেষণা প্রয়োজন।
মূত্রনালি সংক্রমণ, বিশেষ করে কিডনির পাথরকে একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে দেখা দেয়। এ সমস্যা অবহেলা করলে গুরুতর পরিণতি ঘটতে পারে। কিডনিতে গঠিত পাথর অনেক ক্ষেত্রে ছোট হয় এবং সহজেই প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। তবে বড় পাথরের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া জরুরি, যাতে তা ভেঙে ফেলা বা সরানো যায়। সমস্যা শুরুর পর্যায়ে চিকিৎসা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উপেক্ষা করলে জটিলতা বাড়তে পারে এবং গুরুতর ক্ষেত্রে বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
কিডনিতে পাথর হলে ব্যথা সাধারণত অত্যন্ত তীব্র হয়, খিঁচুনি আকারে আসে এবং পিঠ থেকে পেট বা কুঁচকির দিকে ছড়িয়ে পড়ে। পেশির ব্যথার মতো ভঙ্গি বদলালে এ ব্যথা কমে না; বরং ঢেউয়ের মতো তীব্রতা বাড়ে ও কমে। কী কী উপসর্গ দেখে সতর্ক হবেন জেনে নিন
প্রস্রাবে রক্ত থাকা (হিমেচুরিয়া)
প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া অনুভব করা
বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
প্রস্রাবের পথে বাধা তৈরি হলে প্রস্রাবের ধারা দুর্বল হয়ে যাওয়া
সঠিক সময়ে সতর্কতা ও চিকিৎসা গ্রহণ কিডনির পাথরের জটিলতা কমাতে সাহায্য করে। ছোটখাটো উপসর্গ উপেক্ষা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে সমস্যা সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং গুরুতর বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাই শরীরের সংকেতকে গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বিজ্ঞানীদের তৈরি এই ব্যাকটেরিয়া চিকিৎসায় কাজে লাগানো গেলে সুস্থ থাকা আরও সহজ হয়ে উঠবে।
