আজকাল ওয়েবডেস্ক: আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কানের পাশে উঁকি দেওয়া রুপোলি রেখাটা দেখলে মনটা খুঁতখুঁত করে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। এতদিন বার্ধক্যের এই অমোঘ চিহ্নকে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু এবার হয়তো সেই দিন ফুরোতে চলেছে। সাম্প্রতিক এক যুগান্তকারী গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এমন এক পদ্ধতির সন্ধান পেয়েছেন, যা পাকা চুলকে ফের তার কালো রঙে ফিরিয়ে আনতে পারে। আর এর নেপথ্যে রয়েছে আমাদের শরীরেই লুকিয়ে থাকা ‘মাস্টার সেল’ বা স্টেম সেলের কেরামতি।

বহুদিন ধরেই মনে করা হত, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলের রঙ তৈরির জন্য জরুরি কোষগুলি হয়তো মরে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু নতুন গবেষণা সেই ধারণাকে একেবারে নস্যাৎ করে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, চুলের রঙ তৈরির কারিগর ‘মেলানোসাইট স্টেম সেল’ বয়সের সঙ্গে হারিয়ে যায় না, বরং তারা ভুল জায়গায় ‘আটকে’ পড়ে। আর এই কারণেই চুল তার স্বাভাবিক কালো বা বাদামি রঙ হারিয়ে ধূসর হতে শুরু করে।

বিষয়টি ঠিক কী?
আমাদের প্রত্যেকের চুলের গোড়ায়, অর্থাৎ হেয়ার ফলিকল-এ এই বিশেষ স্টেম কোষগুলি থাকে। নির্দিষ্ট সময়ে এই কোষগুলি পরিণত হয়ে ‘মেলানোসাইট’ কোষে রূপান্তরিত হয়, যা ‘মেলানিন’ নামক রঞ্জক পদার্থ তৈরি করে। এই মেলানিনই আমাদের চুলের রঙের জন্য দায়ী। বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখেছেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই স্টেম কোষগুলি ফলিকলের একটি নির্দিষ্ট অংশ থেকে অন্য অংশে গিয়ে আটকে পড়ে। ফলত, তারা আর পরিণত মেলানোসাইট কোষে রূপান্তরিত হতে পারে না এবং মেলানিন উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়। সহজ কথায় বললে, রঙের কারিগররা নিজেদের কারখানা ছেড়ে ভুল জায়গায় চলে যাওয়ায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: অন্য জাতের সঙ্গে সঙ্গম, তাতে জন্মানো সন্তানরাই বদলে দিচ্ছে বংশের স্বভাব-চরিত্র! এ কী দেখলেন গবেষকরা?
এই আবিষ্কারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হল, বিজ্ঞানীরা আটকে পড়া এই স্টেম কোষগুলিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার একটি উপায়ও খুঁজে বের করেছেন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যখনই এই কোষগুলিকে তাদের পুরনো কর্মক্ষেত্রে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে, তারা সঙ্গে সঙ্গে ফের রঞ্জক পদার্থ তৈরি করতে শুরু করছে। ফলস্বরূপ, নতুন যে চুল গজাচ্ছে, তা আর সাদা বা ধূসর হচ্ছে না, বরং তার স্বাভাবিক রঙেই ফিরে আসছে।
এই গবেষণা শুধুমাত্র চুল পাকার মতো একটি প্রসাধনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এর প্রভাব আরও অনেক গভীর। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই আবিষ্কার বার্ধক্য প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের ধারণাকেই বদলে দিতে পারে। পাশাপাশি, মেলানোসাইট কোষের অস্বাভাবিক আচরণের কারণে ত্বকের ক্যানসার বা মেলানোমার মতো ভয়ঙ্কর রোগের চিকিৎসা এবং প্রতিরোধেও এই গবেষণা নতুন দিশা দেখাতে পারে।
আরও পড়ুন: ৭ কোটি শুক্রাণু চাই! চাহিদা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ৫০ সঙ্গীর সঙ্গে একটানা সঙ্গম রানিমার! কোথায় থাকে এই রানি?
তবে বিজ্ঞানীরা এও মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, এখনই বাজারে পাকা চুল কালো করার কোনও ওষুধ চলে আসছে, এমনটা ভাবার কারণ নেই। এই গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, সবে ইঁদুরের উপর সফল হয়েছে। মানুষের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ কতটা সফল এবং নিরাপদ হবে, তা জানতে এখনও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। তবে এ কথা বলাই যায়, বিজ্ঞানের এই অগ্রগতি এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে পাকা চুল আর বার্ধক্যের অবশ্যম্ভাবী লক্ষণ হয়ে থাকবে না, বরং তা হবে নিছকই এক ব্যক্তিগত পছন্দ।