শরীরের কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া মানেই হৃদরোগের ঝুঁকি, বছরের পর বছর এই ধারণা রয়েছে সকলের মনে। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে অন্য কথা। বিজ্ঞানীরাদের মতে, হৃদরোগের প্রকৃত কারণ হয়তো কোলেস্টেরল নয়, বরং অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়া বা গাট মাইক্রোবায়োম। হ্যাঁ, আমাদের শরীরের ভেতরে থাকা এই অদৃশ্য বাসিন্দারাই নাকি হার্ট অ্যাটাকের বিপদঘণ্টা বাজাতে পারে। 

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মানবদেহের অন্ত্রে লক্ষ লক্ষ ব্যাক্টেরিয়া থাকে, যেগুলো হজম, রোগ প্রতিরোধ এবং বিপাক ক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু যখন এই ব্যাক্টেরিয়াগুলোর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ডাইসবায়োসিস, তখন তা হৃদরোগের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে।

বিজ্ঞানীদের মতে, কিছু ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া শরীরে ট্রাইমিথাইলামাইন এন-অক্সাইড (টিএমএও) নামের এক রাসায়নিক তৈরি করে। এই পদার্থ ধমনীতে প্লাক জমিয়ে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে, রক্তচাপ বাড়ায় এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে। আশ্চর্যজনকভাবে এই রাসায়নিক তৈরি হয় যখন মানুষ রেটমিট, ডিম, বা চিজের মতো খাবারে থাকা চোলিন ও এল-কার্নিটিন হজম করে। অর্থাৎ খাওয়ার ধরনই অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়ার স্বভাব বদলে দিচ্ছে। আর সেই পরিবর্তনে বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি।

অন্যদিকে, কিছু ‘ভাল’ ব্যাকটেরিয়া আছে, যারা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন অ্যাসিটেট, প্রোপায়োনেট, বাটিরেট তৈরি করে। এই উপাদানগুলো প্রদাহ কমায়, ধমনীর নমনীয়তা বজায় রাখে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে শরীর স্বাভাবিকভাবে হৃদযন্ত্রকে রক্ষা করতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতের হার্ট চিকিৎসা হয়তো কেবল কোলেস্টেরল কমানোয় সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং লক্ষ্য থাকবে অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়ার ভারসাম্য রক্ষা করা। এজন্য বেশ কয়েকটি নিয়ম মানার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন-

*বেশি প্রাকৃতিক ফাইবার পেতে বেশি করে ফল, শাকসবজি ও সম্পূর্ণ শস্য খান। 

*প্রোবায়টিক ও প্রিবায়টিক খাবার যেমন দই, কলা, পেঁয়াজ, রসুন, ডাল ইত্যাদি খেতে পারেন। 

*রেট মিট ও প্রক্রিয়াজাত খাবার যতটা সম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। 

*নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক শান্তি বজায় রাখুন।

বিজ্ঞানীরা আরও বলছেন, এই গবেষণার মানে এই নয় যে কোলেস্টেরলের গুরুত্ব শেষ হয়ে গেছে। বরং এটি প্রমাণ করেছে, হৃদরোগের চিত্র অনেক জটিল, এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম সেই জটিল সমীকরণের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। চিকিৎসা জগৎ এখন এই নতুন পথেই তাকিয়ে আছে যেখানে হয়তো ভবিষ্যতের হার্ট চিকিৎসা শুরু হবে অন্ত্র থেকেই!