আজকাল ওয়েবডেস্ক: নবম শ্রেণি থেকে নয়, আরও অল্প বয়স থেকেই শিশুদের যৌনশিক্ষা দেওয়া উচিত। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমেও এর অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। এমনই পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের।
বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি অলোক আরাধের একটি বেঞ্চ জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা, যাতে বয়ঃসন্ধিকালের শারীরিক পরিবর্তন এবং সেই সংক্রান্ত সতর্কতা ও কর্তব্য সম্পর্কে শিশুরা অবহিত হতে পারে।
আরও পড়ুন: পেশি ফোলাতে স্তনদুগ্ধ খাচ্ছেন বডিবিল্ডাররা, প্রাপ্তবয়স্কদের এই দুধ কতটা উপকারী? কী বলছে বিজ্ঞান?
বৃহস্পতিবার যুগান্তকারী পর্যবেক্ষণে বেঞ্চ জানিয়েছে, “আমাদের মতে, নবম শ্রেণি থেকে নয়, আরও অল্প বয়স থেকেই শিশুদের যৌনশিক্ষা দেওয়া উচিত। বয়ঃসন্ধিতে শরীরে যে সমস্ত পরিবর্তন আসে এবং সেই সংক্রান্ত সতর্কতা ও যত্ন সম্পর্কে পড়ুয়ারা যাতে অবহিত হতে পারে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভাবনাচিন্তা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ (ধর্ষণ), ৫০৬ (অপরাধমূলক ভীতিপ্রদর্শন) এবং পকসো আইনের ৬ নম্বর ধারায় (গুরুতর যৌন নিপীড়ন) অভিযুক্ত এক ১৫ বছর বয়সি কিশোরের জামিন মঞ্জুর করার সময় এই পর্যবেক্ষণ শীর্ষ আদালতের। অভিযুক্ত যেহেতু নাবালক, তাই শীর্ষ আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয়। জামিনের শর্তাবলী নির্ধারণ করার জন্য জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আদালত জোর দিয়ে বলেছে, বয়ঃসন্ধিকালীন হরমোনের পরিবর্তন সম্পর্কে কিশোর-কিশোরীদের সচেতন করতে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে যৌনশিক্ষার অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: পেশি ফোলাতে স্তনদুগ্ধ খাচ্ছেন বডিবিল্ডাররা, প্রাপ্তবয়স্কদের এই দুধ কতটা উপকারী? কী বলছে বিজ্ঞান?
প্রসঙ্গত, ওই নাবালককে জামিন দিতে অস্বীকার করে এলাহাবাদ হাই কোর্ট। সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতে যান অভিযুক্তের আইনজীবী। তার প্রেক্ষিতেই উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে হলফনামা দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানতে চায়, যোগীরাজ্যে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে কী ভাবে যৌনশিক্ষা দেওয়া হয়? কিংবা আদৌ দেওয়া হয় কি না।
এই মামলার প্রেক্ষিতেই আদালত মনে করে, কৈশোরের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব অনেক সময়েই কিশোরদের অপরাধমূলক কাজের দিকে ঠেলে দেয়। যৌনতা নিয়ে সামাজিক ছুঁৎমার্গ এবং বিদ্যালয়ে সঠিক শিক্ষার অভাবে অনেক সময়েই তারা ভুল তথ্য পায়, যার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, একেবারে গোড়া থেকে অর্থাৎ উচ্চ প্রাথমিক স্তর থেকেই যদি বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে যৌনশিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়, তবে কৈশোরকালীন বহু সমস্যা এবং অপরাধ প্রবণতা এড়ানো সম্ভব। সঠিক যৌনশিক্ষার দ্বারাই বয়ঃসন্ধিকালে পড়ুয়ারা তাদের হরমোনঘটিত পরিবর্তন এবং তার সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শীর্ষ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত সময়োপযোগী। এই ধরনের নির্দেশ প্রমাণ করে যে, বিচারব্যবস্থা এখন সমস্যার গভীরে গিয়ে তার সামাজিক কারণগুলিকেও খতিয়ে দেখছে। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলিকে এখন আদালতের এই নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রয়োজনীয় বদল আনার কথা ভাবতে হবে। পাঠ্যক্রমের সংস্কার করে বয়সোপযোগী যৌনশিক্ষার অন্তর্ভুক্তি ঘটলে তা আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুরক্ষিত এবং সুস্থ সমাজ গঠনে সহায়ক হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
