আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত রবিবার শোকের ছায়া নেমে আসে সঙ্গীত মহলে। মাত্র ৪৮ বছর বয়সে জীবনের সুর হারান ফসিলস ব্যান্ডের প্রাক্তন সদস্য বেসিস্ট চন্দ্রমৌলি বিশ্বাস। মধ্য কলকাতার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁর ঝুলন্ত দেহ।
রবিবার দুপুরে নিজের ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার বদলান চন্দ্রমৌলি। তখনও কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি সন্ধ্যায় এমন একটা খবর মিলবে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে ফলিলসের চন্দ্রমৌলি আর নেই! পাওয়া গিয়েছে সুইসাইড নোট। চন্দ্রমৌলির এভাবে আত্মহনেন পথ বেছে নেওয়ায় স্তম্ভিত অনেকেই।
প্রাথমিকভাবে ধারণা, অবসাদে ভুগছিলেন শিল্পী। শুধু চন্দ্রমৌলি নন, এযাবৎকালে তারকা, শিল্পী থেকে আমজনতা, অনেককেই অবসাদের সঙ্গে যুজতে না পেরে চরম পদক্ষেপ নিতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু কেন দিনকেদিন গ্রাস করছে হতাশা? ব্যাখ্যা করলেন বিশিষ্ট মনোবিদ সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়।
চিকিৎসকের কথায়, "প্রত্যেকের হতাশার কারণ এক নয়। অবসাদের নিউরো বায়োলজিক্যাল এবং সামাজিক ফ্যাক্টর থাকে। সামগ্রিক হতাশা থেকে মারাত্মক অবসাদ তৈরি হলে জীবনকে শেষ করে ফেলার সিদ্ধান্তের দিকে এগোতে পারেন। কারওর কাজের অনিশ্চয়তা, আবার কারও সম্পর্কে জটিলতা কিংবা অন্য কারণে হতাশা গ্রাস করতে পারে। আসলে সকলের অবসাদের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা এক নয়। আর এখানেই নিউরো বায়োলজিক্যাল ফ্যাক্টরগুলির ভূমিকা রয়েছে। যার জন্য একই পরিস্থিতি দু'জন মানুষের হলেও একজন আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। অন্যজন তা করেন না।"
হঠাৎ করে আত্মহত্যার মতো বড় পদক্ষেপ কেউ নেন না । দেখা গিয়েছে, আত্মহত্যাকারী ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে এবিষয়ে ভেবে থাকেন। কিন্তু কাছের মানুষেরা দুর্ভাগ্যবশত সেই লক্ষণ বুঝতে পারেন না বলেই আটকানো যায় না তাঁর চরম পদক্ষেপ। যিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তাঁর মৃত্যুর বেশ কয়েক দিন আগে থেকে বার বার মরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ, মহান অপরাধবোধ বা লজ্জা বোধ, অন্যের কাছে বোঝা মনে করা, জীবনের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলা, প্রায়ই মন খারাপ ইত্যাদি দেখা যায়।
আধুনিক জীবনে ক্রমশ বাড়ছে ব্যস্ততা। আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরছে ডিজিটাল মিডিয়া। কমছে সামাজিক যোগাযোগ। মন খুলে কথা বলা, কথা শোনা, সর্বোপরি বন্ধুর সংখ্যা কমে যাওয়াও অবসাদের অন্যতম কারণ বলে মত ডা: মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, "আড্ডা মারলে, বন্ধু-প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বললে অনেক কিছুর সমাধানসূত্র পাওয়া যায়। কিন্তু এখন সকলেই ব্যস্ত। হাতে সময় কম। অবসরের সঙ্গী ডিজিটাল মাধ্যম। তাই হতাশা-অবসাদ গ্রাস করলে তা মেনে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকছে না।"
সাফল্যের সংজ্ঞা সকলের কাছে এক নয়। সঙ্গে মনের সন্তুষ্টিও সকলের সমান নয়। তাই কারওর কাছে হতাশার কারণ আর্থিক অনিশ্চয়তা, আবার কারও জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলা। সাফল্যের শীর্ষে না থাকলে মেনে নিতে পারেন না অনেকে।
