বিরিয়ানি হোক বা রুটি-কষা মাংস, পাতে তার সঙ্গে দু’টুকরো কাঁচা পেঁয়াজ থাকলে স্বাদ যেন দ্বিগুণ। রেস্তরাঁতে গিয়েও তাই আলাদা করে আবদার, ‘সঙ্গে একটু কাঁচা পেঁয়াজ দেবেন প্লিজ!’ কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ এই অভ্যাস ডেকে আনতে পারে বড় বিপদ।
পেঁয়াজে আছে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর যৌগ, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে সব সময় কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া সকলের জন্য উপযুক্ত নয়। কিছু মানুষের জন্য এটি পেট খারাপ, বা অন্য অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
যাঁরা মাইগ্রেন বা বারবার মাথাব্যথায় ভোগেন, তাদের জন্য কাঁচা পেঁয়াজ কখনও কখনও সম্ভাব্য ট্রিগার হিসাবে কাজ করতে পারে। এর মূল কারণ হল পেঁয়াজে থাকা টাইরামিন নামক প্রাকৃতিক যৌগ। টাইরামিন হল একটি অ্যামিনো অ্যাসিডের বাইপ্রোডাক্ট, যা এই ধরনের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে মাথাব্যথা শুরু বা বাড়িয়ে দিতে পারে।
সব মানুষের ক্ষেত্রে কাঁচা পেঁয়াজের এই প্রভাব দেখা দেয় না। তবে যারা নিয়মিত মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন, তারা লক্ষ্য করতে পারেন যে কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার পর মাথা ব্যথার মাত্রা বৃদ্ধি পায় বা দীর্ঘস্থায়ী হয় কি না। বিশেষ করে সকালে বা খালি পেটে কাঁচা পেঁয়াজ খেলে এই সমস্যা আরও বেশি হতে পারে।
মাইগ্রেন রোগীদের জন্য একটি কার্যকর উপায় হলো খাদ্য লগ বা ফুড জার্নাল রাখা। এতে তারা প্রতিদিন কী খাচ্ছেন এবং কবে মাথাব্যথা হচ্ছে তা নথিভুক্ত করতে পারেন। এর মাধ্যমে সহজেই বোঝা যায় কোন খাবার বা উপাদান, যেমন কাঁচা পেঁয়াজ, মাইগ্রেনের জন্য ট্রিগার হিসেবে কাজ করছে কি না।
কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার সবচেয়ে পরিচিত একটি অসুবিধা হল এর প্রচণ্ড গন্ধ, যা মুখে দীর্ঘক্ষণ থাকে। অন্যদের ক্ষেত্রে এটি অস্বস্তিরও উদ্রেক করতে পারে। পেঁয়াজে থাকে সালফারযুক্ত যৌগ, যা কেবল তীক্ষ্ণ স্বাদ সৃষ্টি করে না, বরং রক্তে প্রবেশ করে। এই যৌগগুলি ধীরে ধীরে ফুসফুসের মাধ্যমে নির্গত হয়, যার ফলে দাঁত ব্রাশ করা বা মাউথওয়াশ ব্যবহার করা প্রায়শই এই গন্ধ দূর করতে পারে না। গন্ধ কমানোর জন্য কিছু প্রাকৃতিক উপায় সাহায্য করতে পারে। যেমন, পার্সলে চিবনো, গ্রীন টি পান করা, বা লবঙ্গ চুষে খাওয়া। তবে খাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেও গন্ধ কিছুটা থেকে যেতে পারে।
কাঁচা পেঁয়াজ পাচনতন্ত্রের জন্য সব সময় ভাল না-ও হতে পারে। বিশেষ করে যাঁদের পেট সংবেদনশীল বা ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS) আছে। পেঁয়াজে থাকে ফ্রুক্টানস। একটি ধরনের কার্বোহাইড্রেট যা হজমের সময় অন্ত্রে ফার্মেন্ট হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে কিছু মানুষের মধ্যে অতিরিক্ত গ্যাস, ফোলাভাব, পেট ব্যথা, এমনকি ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে।
ফ্রুক্টানস ভেঙে সহজে হজমযোগ্য করার জন্য পেঁয়াজ হালকা ভাজা বা রান্না করা যেতে পারে। রান্না করলে পাচনতন্ত্রে জ্বালা বা অস্বস্তি কম হয়।
পেঁয়াজ থেকে অ্যালার্জি তুলনামূলকভাবে কম সাধারণ, তবে কিছু মানুষের জন্য এটি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার ফলে হালকা অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন—চুলকানি, র্যাশ বা চামড়ার ফোলা, চোখে জল আসা, ঠোঁট এবং জিভ ফোলা। কিছু ক্ষেত্রে আরও গুরুতর প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন শ্বাসকষ্ট বা অ্যানাফাইল্যাক্সিস। তখন অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন।
যাঁরা অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজের সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জন্য কাঁচা পেঁয়াজ সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। পেঁয়াজ এইসোফেগিয়াল স্ফিঙ্কটারকে শিথিল করতে পারে। এটি সেই পেশী যা সাধারণত পাকস্থলীর অ্যাসিডকে খাদ্যনালিতে ফিরে যাওয়া থেকে রোধ করে।
স্ফিঙ্কটার শিথিল হলে খাবারের পরে বুকে জ্বালা বা অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে রাতের দিকে বা শুতে যাওয়ার আগে কাঁচা পেঁয়াজ খেলে হার্টবার্ন বা অ্যাসিড সমস্যার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
