আজকাল ওয়েবডেস্ক: এ যেন মশার বিরুদ্ধে বিশ্বযুদ্ধ! চীনে তৈরি করা হল এমন এক যন্ত্র যা কার্যত ইজরায়েলের আয়রন ডোমের কায়দায় ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার মতো করে ধ্বংস করবে উড়ন্ত মশা! চীনের এই ‘লেজার ব্যারিকেড’ এতই শক্তিশালী যে যন্ত্রটি প্রতি সেকেন্ডে ভস্মীভূত করেন৩০ মশা!
ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া... শুধু রোগ নয়, কানের কাছে ভেসে আসা একটানা গুনগুন শব্দটাও যেন এক প্রাণঘাতী আতঙ্ক। বিশেষত এই বর্ষায় জমা জল দেখলেই মনে হয় এই বুঝি রক্তচোষা শত্রু হুল ফোটাল গায়ে! আতঙ্কে কয়েল জ্বালানো, অ্যারোসল স্প্রে, কিংবা ব্যাট হাতে মশার পেছনে ঘরের এক কোণ থেকে অন্য কোণে দৌড়, মশা দমনের এই যুদ্ধটা যেন অনন্তকালের। কিন্তু সেই যুদ্ধে এ বার কি সত্যি খেলা ঘুরতে চলেছে?
আরও পড়ুন: ‘ধরবে নাকি?’ পুরুষাঙ্গ দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দেন প্রযোজক! টাকার বিনিময়ে সঙ্গমও করেন কামসূত্রের নায়িকা?
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত বীর্যপাতে মৃত্যু! শুক্রাণু দান করার নেশায় ডাক্তারি পড়ুয়ার করুণ পরিণতি জানলে চোখে জল আসবে
চিনের এক স্টার্টআপ সংস্থা তৈরি করে ফেলেছে এমন এক ‘মশা নিধন যন্ত্র’, যা দেখলে মনে হবে যেন কল্পবিজ্ঞানের পাতা থেকে উঠে এসেছে। কাজ করে একেবারে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) মতোই। যন্ত্রটির নাম ‘ফোটন ম্যাট্রিক্স’। ঘনক আকৃতির ছোট্ট এই ডিভাইসের ভিতরেই লুকিয়ে রয়েছে প্রযুক্তিগত চমক। লাইট ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং প্রযুক্তির সাহায্যে এটি নিখুঁতভাবে মশার অবস্থান চিহ্নিত করে, তারপর মাত্র ৩ মিলিসেকেন্ডের মধ্যে লেজার ছুড়ে তাকে ভস্মীভূত করে দেয়।
নির্মাতাদের দাবি, প্রতি সেকেন্ডে ৩০টি পর্যন্ত মশা নিকেশ করতে পারে এই যন্ত্র।
কীভাবে কাজ করে এই ‘লেজার বন্দুক’?
বাজারে প্রচলিত মশা মারার যন্ত্রের থেকে এর কার্যপ্রণালী সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রথমে এটি চারপাশের এলাকা সেন্সরের সাহায্যে স্ক্যান করে একটি ত্রিমাত্রিক থ্রিডি মানচিত্র তৈরি করে। এরপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে বিশ্লেষণ করে উড়ন্ত বস্তুর গঠন, গতি এবং ডানার ঝাপটানোর হার। মানুষ, পোষ্য কিংবা মাছির মতো বড় আকৃতির প্রাণীদের কোনও রকম আঘাত করে না যন্ত্রটি। অবলীলায় তাঁদের উপেক্ষা করে শুধুমাত্র মশাকেই আলাদাভাবে শনাক্ত করে ফেলে এই যন্ত্র।
আর একবার মশা চিহ্নিত হলেই নির্দেশ যায় লেজার ইউনিটে। চোখের পলকে ছুটে যায় অদৃশ্যপ্রায় লেজার রশ্মি এবং নিমেষে খতম মশা! কোনও রকম রাসায়নিকের ধোঁয়া, স্প্রের গন্ধ বা তেলের অস্বস্তি ছাড়াই চলতে থাকে মশা নিধন যজ্ঞ।
পরিবেশবান্ধব, জলরোধী এবং বহনযোগ্য এই যন্ত্র। নির্মাতা সংস্থার দাবি, এই ডিভাইস সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এবং মানবদেহের জন্য নিরাপদ। এমনকি পোষ্যের জন্যও কোনও বিপদ নেই। জলরোধী হওয়ায় ঘরের বাইরে, বারান্দা বা বাগানেও ব্যবহার করা যাবে নিশ্চিন্তে। শুধু তাই নয়, চালানো যাবে সাধারণ একটি পাওয়ার ব্যাংক দিয়েও।
দু’টি মডেল, দাম কত?
‘ফোটন ম্যাট্রিক্স’-এর দুটি মডেল বাজারে আনছে সংস্থাটি। বেসিক মডেলটির পাল্লা ৩ মিটার (প্রায় ১০ ফুট), আর প্রো মডেলটির কার্যক্ষমতা দ্বিগুণ, অর্থাৎ ৬ মিটার (প্রায় ২০ ফুট)।
দাম? প্রি-অর্ডার করলে বেসিক মডেলের দাম শুরু হচ্ছে ৪৬৮ ডলার থেকে, অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৯ হাজার টাকা।
কবে আসছে বাজারে?
সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের অক্টোবর থেকেই নির্বাচিত গ্রাহকদের কাছে ডেলিভারি শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হতে পারে ২০২৬ সালের গোড়ার দিকে।
মশা নিধনে নতুন বিপ্লব?
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যন্ত্র বাস্তবে সফল হলে মশা দমনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। বিশেষত ভারত-সহ ক্রান্তীয় অঞ্চলে, যেখানে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ মারাত্মক, সেখানে রাসায়নিকমুক্ত এই সমাধান সত্যিই আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে।
তবে, যতই অভিনব প্রযুক্তি হোক না কেন, তার আসল পরীক্ষা হবে বাস্তব প্রয়োগে। সত্যিই কি প্রতি সেকেন্ডে ৩০ মশা নিধন সম্ভব? নাকি সবই কথার কথা? উত্তর দেবে ভবিষ্যত। তত দিন গুনগুন শব্দের সঙ্গেই বসবাস।
