অনেক দিন ধরেই চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে আসছেন। একে অনেকেই শরীরের জন্য ‘বিষ’ পর্যন্ত বলেছেন। এজন্য অনেকেই তাদের খাদ্যাভ্যাস থেকে চিনি কমানোর চেষ্টা করেন। এমনকি সম্পূর্ণ বাদও দেন।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমরা যে চিনি খাই তা শেষ পর্যন্ত ভেঙে গ্লুকোজে রূপ নেয়। এই গ্লুকোজই রক্তে প্রবাহিত হয়ে শরীরের প্রধান জ্বালানি হিসাবে কাজ করে। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানাচ্ছে—গ্লুকোজের ভূমিকা শুধু শক্তি জোগানোতেই সীমাবদ্ধ নয়।

গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, রক্তের গ্লুকোজ আসলে টি-সেল নামক বিশেষ প্রতিরোধী কোষকে আরও শক্তিশালী করে। টি-সেল ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। গ্লুকোজ তাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বাড়ায় এবং ক্যানসার কোষ ধ্বংস করার ক্ষমতা আরও কার্যকর করে তোলে।
অর্থাৎ সঠিক মাত্রায় গ্লুকোজ আমাদের শুধু শক্তি দেয় না, বরং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সায়েন্স ডেইলি-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান অ্যান্ডেল ইনস্টিটিউটের গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, টি-সেল কেবল শক্তি উৎপাদনের জন্য গ্লুকোজ ব্যবহার করে না। বরং তারা গ্লুকোজকে কাজে লাগিয়ে গ্লাইকোস্পিঙ্গোলিপিডস নামের বিশেষ বৃহৎ অণু তৈরি করে। এই অণুগুলো চিনি এবং ফ্যাটের মিশ্রণে গঠিত। টি-সেলের বৃদ্ধি  এবং ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গ্লাইকোস্পিঙ্গোলিপিডস টি-সেলের পৃষ্ঠে ফ্যাট-সমৃদ্ধ গঠন, যাকে লিপিড র‍্যাফ্টস বলা হয়, তৈরি করতে সাহায্য করে। এই র‍্যাফ্টস এক ধরনের প্ল্যাটফর্মের মতো কাজ করে, যেখানে টি-সেলের ভিতরের গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিনগুলো একত্রিত হয়। এর ফলে শক্তিশালী সংকেত তৈরি হয়, যা টি-সেলকে আরও কার্যকরভাবে ক্যানসার কোষ চিহ্নিত করতে এবং আক্রমণ করতে সক্ষম করে।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, শরীরে পর্যাপ্ত গ্লাইকোস্পিঙ্গোলিপিডস না থাকলে এই সংকেত দুর্বল হয়ে পড়ে এবং টি-সেল ক্যানসার কোষ সঠিকভাবে ধ্বংস করতে পারে না। গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন, যদিও টি-সেল এবং ক্যানসার কোষ উভয়ই বেঁচে থাকার জন্য পুষ্টির ইপর নির্ভরশীল, তবে কোন কোন পুষ্টি টি-সেলকে শক্তিশালী করে তা বোঝা গেলে ভবিষ্যতে আরও কার্যকর ক্যানসার চিকিৎসা সম্ভব হতে পারে।

জোসেফ লঙ্গো নামে এক বিজ্ঞানী ব্যাখ্যা করেছেন যে, টি-সেল তাদের পরিবেশ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। তিনি বলেছেন, “গ্লুকোজ শুধুমাত্র তাদের শক্তির উৎস নয়, বরং এক ধরনের নির্মাণ উপাদান যা তাদের লড়াই করার ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।”
সেল মেটাবলিজম জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফল নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। এর মাধ্যমে এমন চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করা যেতে পারে যা টি-সেলকে সহায়তা করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রাকৃতিক ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং একই সঙ্গে ক্যানসার কোষের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সীমিত করবে।