আজকাল ওয়েবডেস্ক: দুপুরের টিফিন, ফ্রিজে রাখা বেঁচে যাওয়া তরকারি, কিংবা অফিসে নিয়ে যাওয়ার স্যালাড- সব কিছুরই শেষ ঠিকানা আজকাল সেই পুরনো প্লাস্টিকের বাক্স। হালকা, ভাঙে না, জল চুইয়ে পরে না -এই সব সুবিধার কারণে প্লাস্টিকের কৌটো যেন আমাদের রান্নাঘরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কিন্তু জানেন কি, অনেক সময় এই ‘সুবিধা’র জিনিসই শরীরের বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, কিছু নির্দিষ্ট খাবার প্লাস্টিকের সংস্পর্শে এলেই মুক্তি পায় বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ। যেমন বিসফেনল এ (বিপিএ) বা, যা দীর্ঘমেয়াদে শরীরে জমে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। ডেকে আনে ক্যানসারের মতো মারণ রোগ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশেষ করে পাঁচ ধরনের খাবার কখনওই প্লাস্টিকের কৌটোয় রাখা উচিত নয়। কারণ এগুলি প্লাস্টিকের রাসায়নিক উপাদান টেনে নেয়, এবং সেই ক্ষতিকর রাসায়নিক খাবারের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
১। গরম তরকারি
ডাল, মাছ, মাংস বা ঘি-তেল মেশানো যে কোনও রান্না গরম অবস্থায় প্লাস্টিকের কৌটোয় রাখলে বিপদ বাড়ে। গরমে প্লাস্টিকের অণুগুলি গলে রাসায়নিক পদার্থ মিশে যায় খাবারে। বিশেষত যেসব কৌটো মাইক্রোওয়েভ-সেফ নয়, সেগুলিতে তেল বা মশলা থাকা খাবার রাখলে বিপিএ নিঃসরণ আরও বেশি হয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদে লিভার, হরমোন এবং প্রজনন ক্ষমতার উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
২। টকজাতীয় পদ
টমেটো, আচার, লেবু, দই বা ভিনিগার মেশানো খাবার প্লাস্টিকের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক। টকজাতীয় উপাদান প্লাস্টিকের উপরের স্তর ক্ষয় করে রাসায়নিক দ্রবণ তৈরি করে। টমেটো সস মেশানো পাস্তা বা লেবুর রস দেওয়া স্যালাড তাই ফ্রিজে রাখার সময় স্টিল বা কাচের পাত্রই নিরাপদ বিকল্প।
৩। লবণাক্ত খাবার
লবণ ধীরে ধীরে প্লাস্টিক ক্ষয় করে। মাছের আচার, শুকনো ভাজা বা নোনতা ভাজাভুজি জাতীয় খাবার দীর্ঘক্ষণ প্লাস্টিকের মধ্যে থাকলে খাবারের রাসায়নিক গঠন বদলে যেতে পারে। বিশেষ করে গরম আবহাওয়ায় এই পরিবর্তন আরও ত্বরান্বিত হয়, ফলে শরীরে জমে যায় বিষাক্ত উপাদান।
৪।দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
দুধ, দই, পনির বা ক্রিম- এই ধরনের খাবার সহজেই গন্ধ টেনে নেয়। প্লাস্টিকের গন্ধ বা রাসায়নিক অণুও শুষে নিতে পারে। দুধ বা ক্রিম গরম অবস্থায় প্লাস্টিকে রাখলে তা দ্রুত নষ্টও হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের খাবার শিশুদের শরীরে অ্যালার্জি বা হরমোনজনিত সমস্যা বাড়াতে পারে।
৫। অত্যন্ত ঠান্ডা বা জমিয়ে রাখা খাবার
অনেকেই ভাবেন, প্লাস্টিকের কৌটো ফ্রিজে রাখলে সমস্যা নেই। কিন্তু সত্য হল, অধিকাংশ প্লাস্টিক ফ্রিজার-ফ্রেন্ডলি নয়। খুব ঠান্ডায় রাখলে সেগুলির অণু কাঠিন্য হারায় এবং তাতে তৈরি হয় মাইক্রো-ক্র্যাক না আণুবীক্ষণিক ভাঙন। সেখান থেকে খাবারে মিশে যায় ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা। দীর্ঘদিন ফ্রিজে মাংস বা তরল খাবার রাখতে চাইলে তাই কাচ বা স্টিলের কন্টেনারে রাখাই শ্রেয়।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কাচ, স্টিল বা উচ্চ মানের বিপিএ-মুক্ত পলিপ্রোপিলিন পাত্র ব্যবহার করুন। রান্না করা খাবার ঠান্ডা না হলে কখনওই প্লাস্টিকের কৌটোয় ঢালবেন না। মাইক্রোওয়েভে গরম করতে হলে শুধু ‘মাইক্রোওয়েভ সেফ’ পাত্রই ব্যবহার করুন।
এক কথায়, প্লাস্টিকের কৌটো যতই দৈনন্দিন জীবনে প্রিয় হোক, সঠিক খাবার বাছাই না করলে সেটিই পরিণত হতে পারে শরীরের নিঃশব্দ শত্রুতে।
