আজকাল ওয়েবডেস্ক: সবই তো ঠিকঠাক চলছিল। রোজকার কথা, দেখা-সাক্ষাৎ, মেসেজের দেওয়া-নেওয়া। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন সব কেমন বদলে গেল। উত্তর আসে, তবে বড় দেরিতে। কথোপকথনে আগের সেই উত্তাপ নেই। ফোন করলে যেন তাড়াহুড়ো করে ফোন রেখে দেওয়া কিংবা এড়িয়ে যাওয়াই যেন নতুন নিয়ম। আপনার পাশেই মানুষটা বসে আছেন, অথচ মনে হচ্ছে তিনি যেন হাজার মাইল দূরে। সম্পর্কে থেকেও এই যে না থাকার মতো অনুভূতি, মনস্তত্ত্বের দুনিয়ায় এর নামই ‘সাইকোলজিক্যাল ঘোস্টিং’।
ডিজিটাল যুগে ‘ঘোস্টিং’ শব্দটি আমাদের অনেকেরই পরিচিত। এর অর্থ হল, কোনও রকম ব্যাখ্যা ছাড়াই হঠাৎ করে একটি সম্পর্ক থেকে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু সাইকোলজিক্যাল ঘোস্টিং আরও সূক্ষ্ম এবং অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক। এক্ষেত্রে সম্পর্কটা কাগজে-কলমে শেষ হয় না। মানুষটি আপনার জীবন থেকে উবে যান না, কিন্তু তাঁর মানসিক এবং আবেগঘন উপস্থিতিটা সম্পূর্ণ মিলিয়ে যায়। সশরীরে উপস্থিত থেকেও তিনি আপনাকে বুঝিয়ে দেন, এই সম্পর্কে তাঁর আর কোনও মন নেই। মনোবিদদের মতে, এটি এক ধরনের পরোক্ষ আগ্রাসন, যেখানে সরাসরি সংঘাত এড়িয়ে যাওয়ার জন্য অপরজনকে মানসিক ভাবে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: পেশি ফোলাতে স্তনদুগ্ধ খাচ্ছেন বডিবিল্ডাররা, প্রাপ্তবয়স্কদের এই দুধ কতটা উপকারী? কী বলছে বিজ্ঞান?
কেন এত ভয়ঙ্কর এই অনুভূতি?
যে মানুষটি এই মনস্তাত্ত্বিক চাপের শিকার হন, তাঁর মনের উপর এর প্রভাব অত্যন্ত গভীর। প্রথমেই তৈরি হয় এক তীব্র বিভ্রান্তি। যেহেতু সম্পর্কটি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়নি, তাই তিনি বুঝতেই পারেন না ঠিক কী ঘটছে। তাঁর মনে হতে থাকে, ‘আমি কি কিছু ভুল করেছি?’, ‘আমার আচরণে কি কোনও সমস্যা আছে?’- এই জাতীয় প্রশ্নগুলো তাঁকে কুরে কুরে খেতে থাকে। আত্মবিশ্বাসে মারাত্মক চিড় ধরে।
এই কাজের ফলে কোনও স্পষ্ট উপসংহারে পৌঁছনো যায় না। সরাসরি বিচ্ছেদ হলে কষ্ট হয় ঠিকই, কিন্তু মানুষটি অন্তত জানে যে সম্পর্কটা শেষ। কিন্তু এক্ষেত্রে আশা ও নিরাশার এক অদ্ভুত দোলাচলে মন আটকে থাকে। এই অনিশ্চয়তা দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগ এবং মানসিক চাপের জন্ম দেয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি অবসাদের দিকেও ঠেলে দিতে পারে। সমাজের চোখে যেহেতু সম্পর্কটা টিকে আছে, তাই নিজের যন্ত্রণা অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: পেশি ফোলাতে স্তনদুগ্ধ খাচ্ছেন বডিবিল্ডাররা, প্রাপ্তবয়স্কদের এই দুধ কতটা উপকারী? কী বলছে বিজ্ঞান?
কারা করেন এমন আচরণ?
মনোবিদদেড় মতে, যাঁরা সরাসরি সংঘাত বা কঠিন আলোচনা এড়িয়ে চলতে চান, মূলত তাঁরাই এই ধরনের আচরণ করেন। এঁদের মধ্যে মানসিক পরিপক্বতার অভাব দেখা যায়। তাঁরা নিজেরা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে চান, কিন্তু এর ফলে অপরদিকের মানুষটির উপর কী মারাত্মক প্রভাব পড়ছে, তা নিয়ে ভাবেন না বা ভাবার মতো মানসিক ক্ষমতা তাঁদের থাকে না। অনেক সময়, সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফেললেও ব ব্রেক আপ করার মতো সাহস সঞ্চয় করতে না পেরে মানুষ এই পথ বেছে নেয়।
সুতরাং, এটি কোনও সাধারণ মনখারাপ নয়। যাঁরা ‘সাইকোলজিক্যাল ঘোস্টিং’-এর শিকার, তাঁদের জন্য এটি মানসিক স্বাস্থ্যের এক নীরব ঘাতক। এই সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে নিজের আত্মসম্মানকে গুরুত্ব দেওয়া এবং প্রয়োজনে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। এর চেয়ে সম্পর্ক ভেঙে ফেলাই বেশি ভাল বলে মত মনোবিদদের।
