আজকাল ওয়েবডেস্ক: আমরা সবাই দিনের বিভিন্ন সময় টয়লেট ব্যবহার করি—বাড়িতে, অফিসে কিংবা অন্য কোথাও। তবে কেউই সাধারণত এটিকে ফাঁকা সময় কাটানোর জায়গা হিসেবে ভাবেন না। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, অনেক পুরুষের কাছেই টয়লেট এখন ‘মানসিক শান্তির নিরাপদ আশ্রয়স্থল’। ব্রিটেনভিত্তিক বাথরুম পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘পেবল গ্রে’ প্রায় ১,০০০ পুরুষের উপর একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, গড়ে একজন পুরুষ বছরে সাত ঘণ্টা টয়লেটে কাটান কেবলমাত্র বাস্তবতা থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী পুরুষদের এক-তৃতীয়াংশ স্বীকার করেছেন, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে টয়লেটে গিয়ে কিছুটা একাকীত্ব খোঁজেন। কারও কারও জন্য এটি হয়ে উঠেছে জীবনের একমাত্র “নিজস্ব সময়” কাটানোর জায়গা।

সমীক্ষা বলছে, সংসারে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, অতিরিক্ত চঞ্চল সন্তানদের সামলানোর চাপ, ঘরের কাজ থেকে পালানো কিংবা একান্তে মোবাইল ঘাঁটার সুযোগ—এসব কারণেই অনেক পুরুষ টয়লেটে আশ্রয় নেন। ৪৫ শতাংশ পুরুষ জানিয়েছেন, নিজের জন্য একটুখানি সময় বের করাও তাদের পক্ষে কঠিন। আর ২৫ শতাংশ মনে করেন, তাদের জীবন কতটা ব্যস্ত—তা তাদের জীবনসঙ্গিনীরা বুঝতে পারেন না। শুধু পুরুষরাই নন, সমীক্ষায় অংশ নেওয়া আরও ১,০০০ নারীর মধ্যেও ২০ শতাংশ নারী স্বীকার করেছেন, তারাও মাঝে মাঝে সবার থেকে পালিয়ে টয়লেটে কিছুটা শান্তি খোঁজেন।

আরও পড়ুন:   স্তনের 'আকারে' মন ভরেনি! গভীর রাতে পুলিশ ডাকলেন পর্যটক!

তবে দুঃখের বিষয়, এই নিরিবিলি স্থানও সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। সমীক্ষা বলছে, প্রতি ১০টি টয়লেট ভিজিটের মধ্যে একটি নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। বছরে গড়ে ১৭১ বার পুরুষরা টয়লেটে থেকেও বিরক্তির শিকার হন—মূলত সঙ্গী বা সন্তানদের দ্বারা। এমনকি ১০ শতাংশ পরিবার টয়লেট ব্যবহারের সময় “ডু নট ডিস্টার্ব” নিয়ম চালু করেছে, যদিও ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সেই নিয়মও উপেক্ষিত হচ্ছে। একজন মুখপাত্র বলেন, “ব্যক্তিগত সময় এখন অনেকের কাছেই বিলাসিতা। তাই টয়লেট অনেকের কাছেই একমাত্র ‘পবিত্র স্থান’, যেখানে তারা কিছুটা মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পান।” এই গবেষণা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—বেশিরভাগ মানুষের জীবন কতটা ব্যস্ত, আর একটুখানি নিঃশব্দ মুহূর্তও কতটা মূল্যবান হয়ে উঠেছে।

গবেষণায় পুরুষদের দীর্ঘ সময় ধরে টয়লেটে বসে থাকার প্রবণতা যেমন উঠে এসেছে, তেমনই চিকিৎসকরা এ নিয়ে সতর্কতাও দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, টানা বাথরুমে বসে থাকলে শরীরে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। বিশেষ করে পায়খানার চাপে অতিরিক্ত সময় ধরে বসে থাকলে পাইলস বা অর্শের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তেমনি মূত্রনালীর সমস্যা ও প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। অনেক সময় হেমোরয়েডস বা রক্তপাতজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া দীর্ঘ সময় মোবাইল ঘাঁটার কারণে মেরুদণ্ড ও ঘাড়েও চাপ পড়ে। তাই মানসিক প্রশান্তির জন্য অন্য স্বাস্থ্যকর উপায় খোঁজা উচিত বলে মত চিকিৎসকদের।