ঘুম থেকে উঠে চোখ মেলার পর অনেকেই অভ্যাসবশত সঙ্গে সঙ্গে বিছানা গুছিয়ে ফেলেন। কিন্তু জানেন কি, এই অভ্যাসই ডেকে আনতে পারে অদৃশ্য এক সমস্যাকে? ঘুমের সময় ঘাম আর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীর থেকে বার হওয়া তাপ এবং আর্দ্রতা যদি সঙ্গে সঙ্গে ঢেকে দেওয়া হয়, তাহলে তা বিছানার মধ্যেই আটকে যায়। তৈরি হয় উষ্ণ, স্যাঁতসেঁতে এক পরিবেশ, যা ডাস্ট মাইটের বংশবিস্তার করার জন্য একেবারে আদর্শ।
ডাস্ট মাইট বিশ্বের অন্যতম সাধারণ ঘরোয়া অ্যালার্জেনের উৎস। অতি সূক্ষ্ম এই জীবগুলো উষ্ণ এবং আর্দ্র জায়গা পছন্দ করে। বিছানা, ম্যাট্রেস, কার্পেট কিংবা সোফা তাদের প্রিয় আশ্রয়। বিশেষ করে শীতকালে এদের দাপট আরও বেড়ে যায়। কারণ এই সময় জানলা-দরজা কম খোলা হয়, ঘরে বাতাস চলাচল কমে যায়, আর হিটার ব্যবহারে ঘরের ভিতর থাকে উষ্ণতা এবং আর্দ্রতা। ডাস্ট মাইটের জন্য একেবারে স্বর্গ।
তবে আশার কথা শুনিয়েছেন গবেষকরা। লন্ডনের কিংস্টন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ঘুম থেকে উঠেই বিছানা না গুছিয়ে কিছুটা সময় অপেক্ষা করলে সারা বছরই ডাস্ট মাইটের সংখ্যা কমানো সম্ভব। বিছানা খোলা রেখে দিলে রাতে জমে থাকা আর্দ্রতা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। পরিবেশ হয়ে ওঠে শুষ্ক। আর এই শুষ্কতাই ডাস্ট মাইটের সবচেয়ে বড় শত্রু। জলশূন্য হয়ে তারা টিকে থাকতে পারে না।
চমকে দেওয়ার মতো তথ্য হল, যে কোনও সময়ে একটি ম্যাট্রেসে প্রায় ১০ লক্ষ পর্যন্ত ডাস্ট মাইট ঘোরাফেরা করতে পারে। এই ক্ষুদ্র জীবগুলো ত্বকের সমস্যা, নাকের জ্বালা, হাঁচি-কাশি থেকে শুরু করে গুরুতর শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে অ্যাজমায় ভোগা মানুষের ক্ষেত্রে এদের প্রভাব মারাত্মক। পরিসংখ্যান বলছে, সাধারণ মানুষের প্রায় ১০ শতাংশ এবং অ্যালার্জি রোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশই ডাস্ট মাইটের বর্জ্য এবং মৃত দেহের কারণে আক্রান্ত হন।
ডাস্ট মাইট অ্যালার্জি শনাক্ত করতে স্কিন প্রিক টেস্ট কিংবা রক্ত পরীক্ষা করা হয়। চাইলে বাড়িতে ব্যবহারের টেস্ট কিট দিয়েও ঘরের ডাস্ট মাইটের মাত্রা জানা যায়।
এই কারণেই ডাস্ট মাইট নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে শিশু, প্রবীণ ব্যক্তি, অ্যাজমা রোগী এবং দীর্ঘদিনের সাইনাস বা শ্বাসজনিত সমস্যায় ভোগা মানুষের জন্য।
তবে এর মানে এই নয় যে বিছানা একেবারেই গুছোবেন না। আসল কৌশলটা হল সময় ঠিক করা। সকালে উঠেই বিছানা গুছিয়ে না ফেলে অন্তত এক ঘণ্টা খোলা রাখুন। কম্বল বা চাদর সরিয়ে দিন, জানলা খুলে দিন, যাতে তাজা বাতাস বিছানায় ঢুকতে পারে। এতে ঘরের আর্দ্রতা কমে এবং ডাস্ট মাইটের পক্ষে সেখানে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।
যাঁদের সকালে তাড়া থাকে, তাঁরা অফিস থেকে ফিরে এসে বিছানা গুছিয়ে নিতে পারেন। তাতে বিছানাও পরিষ্কার থাকবে, আবার স্বাস্থ্যও সুরক্ষিত থাকবে।
সঙ্গে রাখুন আরও কয়েকটি অভ্যাস। সপ্তাহে অন্তত একবার গরম জলে চাদর ধোয়া, মাসে একবার ভ্যাকুয়াম এবং স্টিম ক্লিনারে বিছানা পরিষ্কার করা এবং ছ’মাস অন্তর বালিশ এবং কম্বল ধোয়া। ছোট ছোট এই বদলই আপনার ঘুমকে আরও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারে।
