শনিবার কলকাতায় এসেছিলেন লিওনেল মেসি। গন্তব্য ছিল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। ফুটবলের যাদুকরকে একবার চোখের সামনে দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন হাজার হাজার মেসিভক্ত। কিন্তু সেই উন্মাদনার মাঝেই তৈরি হয় চরম বিশৃঙ্খলা। অভিযোগ ওঠে, বহু দর্শক নিজের পকেটের টাকা খরচ করে এলেও মাঠে মেসিকে ঠিকমতো দেখার সুযোগ পাননি। প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ। আর সেই অসন্তোষের আগুন ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়, যার আঁচ এসে লাগে অভিনেত্রী শুভশ্রী গাঙ্গুলির দিকেও।
মেসির সঙ্গে দেখা করতে মাঠে হাজির হয়েছিলেন শুভশ্রী। মনে করা হচ্ছে, বিশেষ আমন্ত্রণ পেয়েই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী। শুধু তা-ই নয়। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে লেন্সবন্দিও হয়েছেন রাজ-ঘরনি। ‘ঈশ্বর’ দর্শনের একগুচ্ছ ছবি ভাগ করে নিয়েছেন অনুরাগীদের সঙ্গেও। আর তাতেই হিতে বিপরীত।

মেসির দর্শন না পাওয়ার ক্ষোভ এবার উগরে দিয়েছেন অনুরাগীদের একাংশ শুভশ্রী গাঙ্গুলির উপর। অভিযোগ, মোটা টাকা দিয়ে টিকিট কেটেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিশ্বকাপজয়ী ফুটবল তারকাকে সামনে থেকে দেখার সুযোগ পাননি সাধারণ দর্শক। অথচ ‘তারকা’ তকমার জোরেই নাকি অনায়াসে মেসির কাছে পৌঁছে গিয়েছেন অভিনেত্রী। এবার এই বিষয়ে মুখ খুললেন রাজ চক্রবর্তী। স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে কথা বললেন রাজ।
সমাজমাধ্যমে রাজ চক্রবর্তী লিখলেন, 'প্রথমেই বলি, গতকাল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের অরাজগতা অনভিপ্রেত। এটা ফুটবল এবং ফুটবলপ্রেমী বাঙালির অসম্মান। এই অরাজগতার সম্মুখীন আমরা আগেও হয়েছি ইস্টবেঙ্গল - মোহনবাগান ম্যাচে। তারপরেও কেন এত বড় ইভেন্টের কাঠামোগত সচেতনতায় ফাঁক থেকে গেল? আয়োজকেরা কী মেসি-র জনিপ্রিয়তা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না? আমি অবশ্যই চাইব দোষীরা শাস্তি পাক। বাঙালির আবেগ আহত হয়েছে গতকাল।'
রাজ আরও লেখেন, 'গতকালের অনুষ্ঠানে অনেকের মধ্যে আমন্ত্রিত ছিলেন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির তরফে শুভশ্রী গাঙ্গুলী। এবং এই অরাজগতার মাঝে নিজের উপস্থিতির খেসারত দিতে হচ্ছে ওকে। ওর অপরাধ সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসি-র সঙ্গে ছবি পোস্ট করা। যেখানে হাজার হাজার মানুষ দাম দিয়ে টিকিট কিনে নিজের স্বপ্নের নায়ক-কে একবারের জন্য দেখতে পেলেন না, প্রতারিত হলেন, বঞ্চিত হলেন, তাদের এই ক্ষোভ আসবেই৷ কিন্তু কিছু রাজনৈতিক নেতা যারা গোটা ঘটনার আগে পরে না থেকেও মন্তব্য ছুড়ছেন - 'একজন সিনেমার নায়িকার ওখানে থাকার কী দরকার?', তাদের উদ্দেশ্যে বলি, শুভশ্রী গাঙ্গুলীকে কতটুকু চেনেন আপনারা? অভিনেত্রী বলে তিনি মেসির ভক্ত হতে পারেন না? একজন মানুষের লিঙ্গ, পেশা, সম্পর্কের নিরিখে একাধিক সামাজিক পরিচয় থাকে। ঠিক তেমনই শুভশ্রী মা, কখনও বোন, কখনও স্ত্রী, কখনও অভিনেত্রী, কখনও বন্ধু, কখনও আবার কারওর ফ্যান। সব কিছুর উপর তিনি একজন মানুষ। কিন্তু এক্ষেত্রে মানবিকতার সমস্ত পরিসীমা পেরিয়ে অভিনেত্রী শুভশ্রী গাঙুলী-কে টার্গেট করে মিম তৈরি করছেন, ট্রোল করছেন।'
তিনি আরও লেখেন, 'পরিচিত মুখ বলে একজন অভিনেত্রীর শারিরীক গঠন থেকে, তিনি বিধায়কের স্ত্রী, তাঁর সন্তান - পরিবার সব কিছুই সমালোচনায় বিষয় হয়ে উঠছে। কেন? তিনি একজন নারী বলে? বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অভিনেত্রী বলে? যদি কোনো বলিউডের পরিচিত মুখ থাকতেন, আপনাদের ন্যারেটিভ এমনই হত? যারা ট্রোল করছেন তারা ভুলে যাচ্ছেন একজন মানুষের প্রতি, একজন নারীর প্রতি তাদের এই ব্যবহার থেকে যাবে আগামীর জন্যে। তাদের এই ব্যবহার থেকেই শিক্ষা নেবে আগামী প্রজন্ম। প্রতিবাদ আর অপমান দু'টো বিষয়ে বিস্তর ফারাক সেটা বোঝা এবং বোঝানো বিশেষ প্রয়োজন। গতকালের অরাজকতা, মাঠের মধ্যে যা কিছু হয়ে গেছে তার সঙ্গে শুভশ্রীর কোনো যোগাযোগ নেই। তিনিও আপনাদের মতই ফুটবলের মহাতারকাকে দেখতে গেছিলেন! শুভশ্রীও নিজেও গতকালের গোটা ঘটনাটি ভীষণভাবে আহত।'
পরিচালক, প্রযোজক লেখেন, 'কালকের অরাজগতা বাংলার অপমান। বাঙালির অপমান। আমাদের উচিত কালকের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া। আগামীকে শুধরাতে গেলে আমাদের সকলের একসাথে শেখা প্রয়োজন। আলোচনা সমালোচনায় সমাধান উঠে আসুক। ট্রোল কালচারে নয়। আর শুভশ্রী, যে নারীর নিজস্ব কণ্ঠস্বর আছে, তিনি স্বভাবতই একজন শক্তিশালী নারী, আর আমি জানি তুমি ঠিক কতটা শক্তিশালী! তোমাকে খুব ভালবাসি। জীবন আমাদের যেখানেই নিয়ে যাক না কেন, আমি তোমার পাশে সবসময় থাকব, এই প্রতিজ্ঞা করছি।'
প্রসঙ্গত, রাজের এই পোস্টেও নেটিজেনদের মন্তব্য ছিল আগের মতোই। বরং আরও বেড়েছে কটাক্ষের পরিমাণ।
