অনেকেই খাওয়ার পর এক টুকরো এলাচ খান। দেখলে সহজ মনে হলেও, ছোট্ট সবুজ এই মশর ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। এই মশলা আয়ুর্বেদ থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী রান্নায় বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মিষ্টি গন্ধ এবং অনন্য স্বাদের জন্য ‘মশলার রানি’ নামে খ্যাত হলেও, এর আসল শক্তি লুকিয়ে আছে প্রাকৃতিক আরোগ্যক্ষমতায়।
হেলথলাইনের মতে, এলাচে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরকে টক্সিন বা ক্ষতিকর উপাদানের প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এটি যকৃত এবং কিডনির কাজকে সহায়তা করতে পারে—যে অঙ্গগুলি শরীর থেকে বর্জ্য ছেঁকে বার করে। খাবারের পর এলাচ চিবনো একা হাতে ডিটক্স করাবে না ঠিকই, তবে নিয়মিত খেলে বিপাকক্রিয়া এবং অভ্যন্তরীণ পরিস্কার প্রক্রিয়া উন্নত হতে পারে।
হজমশক্তি বাড়ায়
অনেকের কাছে এলাচের সবচেয়ে বড় উপকার হজমে। এর এসেনশিয়াল অয়েল ও সিনিওল–এর মতো যৌগ হজম–এনজাইম নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে। এসব এনজাইম খাবার ভাঙতে সাহায্য করে, ফলে খাবারের পর পেট ভার, গ্যাস বা অম্বল কম হয়। তাছাড়া এলাচ পাকস্থলীর পেশি শিথিল করে, যার ফলে ভারী বা তেল–মশলাযুক্ত খাবারের পর অস্বস্তি কমে যায়।
প্রাকৃতিক মাউথ–ফ্রেশনর
এলাচ চিবলে প্রথমেই যে পরিবর্তন টের পাওয়া যায়, তা হল শ্বাস–প্রশ্বাসের সতেজতা। এলাচের সুগন্ধি তেল মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। রসুন, পিঁয়াজ বা ঝাঁঝালো মশলাযুক্ত খাবারের পর এটি বিশেষভাবে কার্যকর। এলাচ লালা নিঃসরণও বাড়ায়, যা মুখে থাকা খাবারের কণা পরিষ্কার করে—ফলে মুখের স্বাস্থ্য ভাল থাকে, তাও আবার সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে।
মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে কমায়
খাবারের পর যাদের মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা বেশি, এলাচ তাদের জন্য প্রাকৃতিক সমাধান হতে পারে। এলাচের স্বাভাবিক মিষ্টি গন্ধ এবং স্বাদ ডেজার্ট খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কমায়। অনেকেই বলেন, এর শান্ত সুবাস ‘ইমোশনাল ইটিং’ কমায় এবং ‘মাইন্ডফুল ইটিং’-এ সাহায্য করে। মেডিক্যাল নিউজ টুডে-র মতে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে এই মশলা বেশ কার্যকর।
সহজেই দৈনন্দিন অভ্যাসে যোগ করা যায়
সাধারণত অল্প পরিমাণে এলাচ খাওয়া নিরাপদ। খাবারের পর এক–দু’টি গোটা এলাচ চিবলেই যথেষ্ট। সুস্বাদু স্বাদ, মনমাতানো গন্ধ এবং নানা স্বাস্থ্যগুণ—এই সব মিলিয়ে পুরনো এই অভ্যাস আজও সমানভাবে উপকারী।
এলাচ শুধু একটি মশলা নয়—এটি দীর্ঘদিনের খাদ্যাভ্যাসে জুড়ে থাকা এক প্রাকৃতিক উপকারী উপাদান। খাবারের পর ছোট্ট একটি এলাচ চিবনো যেমন মুখের স্বাদ বদলে দেয়, তেমনই শরীরের ভিতরে শুরু করে নানাভাবে কাজ—হজমশক্তি বাড়ায়, টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে, শ্বাসকে করে সতেজ এবং অপ্রয়োজনীয় মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছাও কমায়। আধুনিক গবেষণাও প্রমাণ করেছে, সেই প্রাচীন জ্ঞানকে। তাই ব্যয়বহুল সাপ্লিমেন্টে নয়, বরং ছোট্ট একটি এলাচেই লুকিয়ে থাকতে পারে দৈনন্দিন সুস্থতার সহজতম পথ।
