শীত এলেই অনেকে ডাবের জল খাওয়া বন্ধ করে দেন। ডাবের জল 'ঠান্ডা', তাই শীতে খেলেই সর্দি-কাশি বা শরীর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে, এমন ধারণা প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে, এই ধারণা পুরোপুরি ভুল। বরং শীতকালে ডাবের জল খাওয়া শরীরের জন্য বেশ উপকারী। বিশেষ করে সাইলেন্ট ডিহাইড্রেশন নামক সমস্যা থেকে রক্ষা করে এই পানীয়।
শীতে আমাদের তৃষ্ণা কম পায়। গরমের মতো ঘাম হয় না বলে মনে হয় শরীরে জলের দরকার নেই। কিন্তু বাস্তবে শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় শ্বাস নেওয়ার সময় এবং ত্বকের মাধ্যমে শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায়। ফলে অজান্তেই শরীর জলশূন্য হয়ে পড়ে। একেই বলা হয় সাইলেন্ট ডিহাইড্রেশন। এর ফল হতে পারে ক্লান্তি, মাথাব্যথা, ত্বক শুষ্ক হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং মনোযোগ কমে যাওয়া। এই অবস্থায় ডাবের জল খুব ভাল কাজ করে।
ডাবের জলে থাকে প্রাকৃতিক জল, সঙ্গে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইট। এগুলো শরীরের জল ও খনিজের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই শুধু গরমে নয়, শীতেও ডাবের জল শরীরকে ভিতর থেকে হাইড্রেটেড রাখে।
শীতকালে অনেকেরই শরীর ভারী লাগে, এনার্জি কমে যায়। ডাবের জলের প্রাকৃতিক শর্করা শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায়, কিন্তু রক্তে শর্করা হঠাৎ বাড়ায় না। তাই এটি ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি শীতে ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে যায়। নিয়মিত ডাবের জল খেলে ত্বক ভিতর থেকে আর্দ্র থাকে, শুষ্কভাব ও রুক্ষতা কমে।
শীতকালে অনেকেই নোনতা ও ভারী খাবার বেশি খান। ডাবের জলের পটাশিয়াম শরীরে সোডিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপকারী।
তবে শীতে ডাবের জল খাওয়ার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। খুব ঠান্ডা বা ফ্রিজের ডাবের জল না খেয়ে ঘরের তাপমাত্রায় পান করাই ভাল। সকালে বা দুপুরে খাওয়া সবচেয়ে উপযুক্ত। চাইলে এক চিমটে আদা গুঁড়ো বা গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা কমে। যাদের কিডনির সমস্যা আছে বা ডায়াবেটিস খুব বেশি, তারা নিয়মিত ডাবের জল খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, শীতকালে ডাবের জল খাওয়া মোটেও ক্ষতিকর নয়। বরং সঠিক সময়ে ও পরিমিত পরিমাণে খেলে এটি শরীরকে হাইড্রেটেড, সতেজ ও সুস্থ রাখতে দারুণ সাহায্য করে।
