দৈনন্দিন জীবনে ভুলে যাওয়া অনেকের কাছেই খুব সাধারণ ঘটনা কেউ হয়তো চশমা কোথায় রেখেছেন ভুলে যান, কারওর নাম বা তারিখ মনে থাকে না। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিনের এমন ভুলে যাওয়া সব সময়ই যে গুরুতর সমস্যা হয় এমনটা নয়। কিন্তু যখন এই স্মৃতিভ্রংশ ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং জীবনের নানা ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে শুরু করে, তখন তা ডিমেনশিয়ার লক্ষণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ ভুলে যাওয়া ও ডিমেনশিয়ার মধ্যে কয়েকটি স্পষ্ট পার্থক্য আছে। যা চিনে রাখা জরুরি।
ভুলে যাওয়া ও ডিমেনশিয়ার মধ্যে পার্থক্য
১. স্মৃতি হারানোর ধরনঃ বয়সজনিত কারণে অনেকে সাময়িকভাবে কিছু ভুলে যান। কিন্তু পরে মনে পড়ে যায়। অথচ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি সাম্প্রতিক ঘটনা বা তথ্য একেবারেই মনে করতে পারেন না।
২. ক্রমাগত অবনতিঃ সাধারণ ভুলের তুলনায় ডিমেনশিয়ায় প্রতিদিন ভুলের সংখ্যা ও মাত্রা বাড়তে থাকে। যেমন জিনিসপত্র কোথায় রাখা আছে, গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা তারিখ ভুলে যাওয়া ইত্যাদি।
৩. সময় ও ঘটনার বিভ্রান্তিঃ ডিমেনশিয়ায় রোগীরা প্রায়ই কোনও ঘটনা কখন ঘটেছে তা গুলিয়ে ফেলেন। পুরনো স্মৃতির সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনা মিশিয়ে দেন, এমনকী অনেক সময় ভ্রান্ত বা মিথ্যে স্মৃতিও তৈরি হয়।
৪. সমস্যা বুঝতে না পারাঃ বয়সজনিত ভুলে যাওয়া ব্যক্তি সাধারণত তা স্বীকার করেন। কিন্তু ডিমেনশিয়ার রোগীরা প্রায়ই ভুল মেনে নিতে চান না।
৫. অতিরিক্ত জটিলতাঃ শুধু স্মৃতিভ্রংশ নয়, কথা বলার সময় শব্দ মনে না পড়া, সহজ কাজেও বিভ্রান্তি, হিসাব মেলাতে না পারা, পথ হারিয়ে ফেলা, আচরণে পরিবর্তন, উদ্বেগ বা ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডিমেনশিয়া নিয়ন্ত্রণের উপায়
১. নিয়মিত ব্যায়াম করুন – হাঁটা, জগিং, সাঁতার, সাইক্লিং ইত্যাদি শারীরিক কার্যকলাপ মস্তিষ্ক ও শরীর সক্রিয় রাখে।
২. পুষ্টিকর খাবার খানঃ শাকসবজি, ফল, বাদাম, দুধ ও পরিমিত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার মস্তিষ্কের পক্ষে উপকারী।
৩. পর্যাপ্ত ঘুমঃ দীর্ঘমেয়াদে ঘুমের অভাব স্মৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন ভাল মানের ঘুম জরুরি।
৪. সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখুনঃ বন্ধু, পরিবার ও সামাজিক গোষ্ঠীর সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে।

৫. মস্তিষ্কের ব্যায়াম করুনঃ পাজল সমাধান, আঁকাআঁকি, লেখা, পড়া বা বিশ্লেষণধর্মী কাজ স্মৃতিকে শক্তিশালী করে।
৬. চাপ নিয়ন্ত্রণ করুনঃ মেডিটেশন, কাউন্সেলিং বা বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিয়ে মানসিক চাপ ও হতাশা কমাতে হবে।
৭. রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ এই ধরনের রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমে। ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলাও গুরুত্বপূর্ণ।
৮. প্রয়োজনীয় ওষুধ খানঃ কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়া উপকারী হতে পারে।
৯. রোগীর প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণঃ সরাসরি ভুল ধরিয়ে দিলে রোগী বিরক্ত বা হতাশ হতে পারেন। ক্যালেন্ডার, রিমাইন্ডার ও ঘড়ির মতো সহজ সরঞ্জাম ব্যবহার করা ভাল।
১০. যখন প্রয়োজন তখন সহায়তা করুনঃ রোগীর সক্ষমতা অনুযায়ী তাকে স্বাধীন রাখুন, তবে জরুরি পরিস্থিতিতে সাহায্য করুন।
