প্রিয়জন দূরে থাকলে আর স্পর্শের অভাব অনুভব হবে না। প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য এমনই অভিনব উপহার নিয়ে এসেছে চীনের এক কোম্পানি। কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় একাকীত্ব ও সম্পর্কের দূরত্ব থেকেই জন্ম নিয়েছে এই বিশেষ যন্ত্র, যা দূর থেকে চুম্বন পাঠানোর মেশিন। এই যন্ত্রটির নাম ‘মুয়া’ যা চুম্বনের শব্দ থেকেই নেওয়া।
কী এই মুয়া মেশিন? এটি দেখতে অনেকটা মোবাইল স্ট্যান্ডের মতো। এর সামনে রয়েছে মানুষের ঠোঁটের মতো দেখতে নরম সিলিকনের ঠোঁট। এই ঠোঁটের ভেতরে বসানো আধুনিক মোশন সেন্সর। কেউ যখন এই ঠোঁটে চুম্বন করেন, তখন সেই নড়াচড়া, চাপ এবং ছন্দ সেন্সরের মাধ্যমে রেকর্ড হয়। পরে সেই তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে অন্য প্রান্তে থাকা একই ধরনের যন্ত্রে পাঠানো হয়। অন্য প্রান্তে থাকা যন্ত্রটি ঠিক একইভাবে ঠোঁট নাড়ায়, যেন সত্যিই কেউ চুম্বন করছে। শুধু তাই নয়, বাস্তব অনুভূতি দিতে যন্ত্রটি হালকা উষ্ণও হয় এবং চুম্বনের মতো শব্দও শোনায়।
কীভাবে ব্যবহৃত হয়? এই মেশিন ব্যবহার করতে হলে স্মার্টফোনে একটি বিশেষ অ্যাপ ডাউনলোড করতে হয়। দু’জন ব্যবহারকারী অ্যাপের মাধ্যমে নিজেদের যন্ত্র জোড়া লাগান। এরপর একজন যখন যন্ত্রে চুম্বন করেন, সঙ্গে সঙ্গে অন্যজন সেই অনুভূতি পান। চাইলে অ্যাপের মাধ্যমে অন্য ব্যবহারকারীদের চুম্বনের ডেটাও ডাউনলোড করা যায়।
এই যন্ত্রের আবিষ্কারক ঝাও জিয়ানবো জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় তিনি তাঁর প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে পারতেন না। দীর্ঘদিন বাড়িতে বন্দি থাকার ফলে মানসিক চাপ এবং একাকীত্ব বেড়ে যায়। ভিডিও কল থাকলেও সেখানে শারীরিক স্পর্শের অভাব ছিল। এই অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁর মাথায় আসে এমন একটি যন্ত্র তৈরির ভাবনা, যা দূর থেকেও ভালবাসার স্পর্শ পৌঁছে দিতে পারবে।
ইতিমধ্যেই বাজারে এসে গিয়েছে মুয়া। এর দাম প্রায় ২৬০ ইউয়ান, অর্থাৎ ভারতীয় টাকায় আনুমানিক ৪,৫০০ টাকা। অনেকেই এই যন্ত্রকে আধুনিক প্রযুক্তির চমক বলে প্রশংসা করেছেন। দূরে থাকা দম্পতি ও প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে এটি বেশ আকর্ষণীয়। তবে কেউ কেউ অস্বস্তিও প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, যন্ত্রে জিহ্বা না থাকায় পুরো চুম্বনের অনুভূতি আসে না। আবার অনলাইনে এর অপব্যবহার হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যদিও এমন যন্ত্র এই প্রথম নয়। ২০১১ সালে জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ার একটি গবেষণা সংস্থাও একই রকম চুম্বন পাঠানোর যন্ত্র তৈরি করেছিল। তবে মুয়া সহজ ব্যবহার, কম দাম এবং আধুনিক প্রযুক্তির কারণে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, প্রযুক্তির সাহায্যে ভালবাসায় দূরত্ব যেন আর বাধা নয়! ভবিষ্যতে সম্পর্কের ভাষা বদলে দিতে পারে এমনই উদ্ভাবন এই যন্ত্র।
