আসছে নতুন বছর। আনন্দে মেতে ওঠার এই তো সময়। দেদার খানাপিনা, হইহুল্লোড়, চারিদিকে পার্টি ডেস্টিনেশনে হরেক আয়োজন। তবে রেস্তরাঁ, ক্যাফের কোলাহল কিংবা ক্লাব, পাবের 'লাউড' মিউজিক সকলের পছন্দ নয়। বদলে পরিচিত পরিবেশে বন্ধু, পরিবার কিংবা কাছের মানুষদের নিয়ে আনন্দে মেতে উঠতে চান অনেকে। আসলে হাউসপার্টি মানেই ঘরোয়া পরিবেশে নিজের মতো করে, নিজের নিয়মে সবকিছু করা যায়। সঙ্গে নির্ভেজাল আড্ডা যেন মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠার সুযোগ দেয়। তবে তার জন্য বাড়িতে গুছিয়ে আয়োজন করা দরকার। ঘর সাজানো থেকে খাবারের মেনু কিংবা অতিথিদের তালিকা, সবই হতে হবে নিঁখুত। আগেভাগে দরকার সঠিক কয়েকটা প্ল্যান। তাহলেই আপনার বাড়ির পার্টিতে মুগ্ধ হবেন অতিথিরা। 

বাজেট প্ল্যান 

শুরুতেই ঠিক করুন কতজনকে আমন্ত্রণ জানাবেন। ঘরের জায়গা ও বসার ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে অতিথির সংখ্যা নির্ধারণ করুন। এরপর খাবার, সাজসজ্জা আর ছোটখাটো প্রয়োজনীয় জিনিস মিলিয়ে একটা মোটামুটি বাজেট ঠিক করুন। এতে শেষ মুহূর্তে অযথা চাপ পড়বে না।

অতিথিদের তালিকা

বর্ষবরণের পার্টিতে অতিথিদের তালিকায় থাকুক একান্ত আপন মানুষেরা। যারা শুধু পার্টিতে অংশই নেবেন না, প্রয়োজনে আয়োজনের সাহায্যেও এগিয়ে আসবেন। আপনি খোশমেজাজে আড্ডা মারতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না, এমন কাউকে লিস্টে না রাখাই শ্রেয়। 

থিম ও সময়সূচি 

পার্টিতে থিম থাকলে আনন্দ অনেকটাই বেড়ে দেয়। কালার কোড, রেট্রো নাইট, ফ্যামিলি বা পাজামা পার্টি-যে কোনও একটি বেছে নিতে পারেন। সঙ্গে একটা সহজ সময়সূচি বানান। অর্থাৎ খাবার পরিবেশন, খেলার আয়োজন, কেক কাটা সহ সবকিছুরই সময় পরিকল্পনা করে রাখুন। এতে পার্টি অনেকটাই গোছানো হবে।

ঘরের সাজ

ছাদে, বাগানে, না ঘরে? পার্টি কোথায় করবেন সেই অুযায়ী বাড়ি সাজান। ফেয়ারি লাইট, বেলুন, কাগজের লণ্ঠন, ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ব্যানারে ঘরের মুড বদলে দিন। যে কোনও সুন্দর কাচের বোতলে টুনি লাইট ভরে কিংবা বাইরে জড়িয়ে অপূর্ব আলোর রোশনাই তৈরি করতে পারেন। বাড়ির বাগান, ছাদ কিংবা বারান্দায় গাছের ডালেও টুনি লাইট সুন্দর করে পেঁচিয়ে জ্বালালে বেশ রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি হবে। কম খরচে ঘর সাজাতে ফুলের বিকল্প নেই। একগুচ্ছ তাজা ফুল ঘরের এক কোণায় রাখলে ভাল থাকবে মন, উজ্জ্বল দেখাবে ঘরও। বসার ঘরের আড্ডার জায়গায় মোটা তোষকের ওপর গাঢ় রঙের চাদর বিছিয়ে দিন। তাতে রাখুন রকমারি ডিজাইনের কুশন। বাড়ির কার্পেটও বদলে নিতে পারেন। ঘরকে প্রাণবন্ত করতে এয়ারফ্রেশনার, সুগন্ধি মোমবাতিও ব্যবহার করতে পারেন। যারা ছবি তুলতে ভালবাসেন, তাদের জন্য বাড়ির এক কোণে ছোট ফটো কর্নারের ব্যবস্থা করতে পারেন।


মেনু বাছাই

যে কোনও পার্টিতে খাওয়াদাওয়া অন্যতম আকর্ষণ। স্টার্টার থেকে মেইন কোর্স, সবই খুব বেশি আহামরি রান্নায় যাবেন না। আজকাল বেশিরভাগ মানুষেরই স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে ঝোঁক নজরে আসে। তাই ডিপ ফ্রায়েড স্টার্টারের বদলে সঁতে, গ্রিলড এবং বিভিন্ন স্যালাডের ব্যবস্থা রাখতে পারেন। হাতে সময় থাকলে বাড়িতে বানানো খাবারের স্বাদ পার্টির আনন্দ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে। নিরামিষাশী অতিথিদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখতে ভুলবেন না। সঙ্গে ডেসার্ট এবং মকটেল থাকলে জমে যাবে হাউসপার্টির ভূরিভোজ। সুদৃশ্য পাত্রে খাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখুন। তাহলে পরিবেশনের ঝামেলা থাকবে না, অতিথিরা পছন্দমতো খাবার নিজেরাই নিয়ে খেতে পারবেন। 

গান ও গেম

পার্টির আনন্দ বাড়াতে গান আর খেলার ব্যবস্থা রাখতে পারেন। পাবের মতো লাউক মিউজিক নয়, হাউসপার্টিতে ঘরোয়া আরামদায়ক পরিবেশের কথা মাথায় রেখে বাজাতে হবে গান। সব বয়সের মানুষ যেন উপভোগ করতে পারেন, এমন একটা প্লেলিস্ট আগেই বানিয়ে নিন। সঙ্গে ডামশারস, অন্তাক্ষরী, তাস বা লুডোর মতো খেলার ব্যবস্থা রাখলে হাসি-ঠাট্টায় সময় কখন যে কেটে যাবে, টেরই পাবেন না।

কেক ভুলবেন না

বর্ষবরণ কেক ছাড়া কি চলে? নববর্ষের জন্য বিশেষ থিম কেক রাখতে পারেন। রাত ঠিক ১২টায় ঘরোয়া কেক বা ব্রাউনি দিয়েই মিষ্টিমুখ হয়ে যাবে অতিথিদের। 

আরামের দিকে থাক নিরাপত্তা

পার্টিতে আমন্ত্রিত বয়স্ক ও শিশুদের দিকে বিশেষ নজর দিন। রাত বেশি হলে অতিরিক্ত শব্দ এড়িয়ে চলুন। গাড়ি চালিয়ে আসা অতিথিদের জন্য নিরাপদ যাতায়াতের কথাও মনে রাখুন।

কাউন্টডাউন

সবশেষে আসে বছর শেষ আর নতুন বছরের শুরুর রাত বারোটার সেই বিশেষ মুহূর্ত। পার্টির জায়গায় বড় একটা ঘড়ি রাখতে পারেন। কাউন্টডাউন, হাততালি, একে অপরকে শুভেচ্ছা বিনিময়-এই ছোট ছোট অনুভূতিই বর্ষবরণে হাউসপার্টিকে স্মরণীয় করে তুলবে।