আজকাল ওয়েবডেস্ক: আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে বদলে গিয়েছে আমাদের খাদ্যাভ্যাস, কমেছে শারীরিক পরিশ্রম। ফলে ক্রমশ নিঃশব্দে শরীরে বাসা বাঁধছে একাধিক অসুখ। কোলন বা মলাশয়ের ক্যানসার তার মধ্যে অন্যতম। চিকিৎসকদের মতে, প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগের লক্ষণগুলি এতটাই অল্প থাকে যে, অনেকেই সেগুলিকে বদহজম বা পেটের সাধারণ গোলযোগ ভেবে উপেক্ষা করেন। আর এই অবহেলাই পরবর্তীকালে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনে। সচেতনতা এবং জীবনযাত্রায় কিছু জরুরি পরিবর্তনই পারে এই রোগের ঝুঁকি কমাতে।
আরও পড়ুন: ৩ মিনিটে ভাঙা হাড় জুড়ে যাবে! যুগান্তকারী ‘আঠা’ আবিষ্কার চীনের বিজ্ঞানীদের, বদলে যাবে চিকিৎসাশাস্ত্রের রূপরেখা?
কোন কোন উপসর্গে হবেন সতর্ক?
কোলন ক্যানসারের উপসর্গগুলি একেকজনের ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
১। মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন: কোনও আপাত কারণ ছাড়াই যদি দীর্ঘ দিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়ারিয়ার সমস্যা চলতে থাকে, তবে তা চিন্তার বিষয়। মলত্যাগের পরেও পেট পুরোপুরি পরিষ্কার হয়নি, এমন অনুভূতি হওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
২। মলের সঙ্গে রক্তপাত: মলের সঙ্গে তাজা লাল বা কালচে রঙের রক্ত বের হওয়া কোলন ক্যানসারের অন্যতম প্রধান উপসর্গ। যদিও অর্শ বা অন্য কারণেও এমনটা হতে পারে, তবুও বিষয়টিকে অবহেলা করা একেবারেই অনুচিত।
৩। পেটে অস্বস্তি: একটানা পেটে ব্যথা, গ্যাস, পেট ফাঁপা বা ক্র্যাম্পের মতো সমস্যা যদি চলতেই থাকে, তবে তা মলাশয়ের কোনও সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
৪। অকারণে ওজন হ্রাস: খাদ্যাভ্যাসে কোনও পরিবর্তন না আনা সত্ত্বেও যদি দ্রুত ওজন কমতে শুরু করে, তবে তা শরীরের অভ্যন্তরে কোনও বড় রোগের লক্ষণ হতে পারে, যার মধ্যে কোলন ক্যানসারও অন্যতম।
৫। দুর্বলতা এবং ক্লান্তি: শরীরে আয়রনের ঘাটতি বা অ্যানিমিয়ার কারণে অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। মলাশয়ে রক্তক্ষরণের ফলে এই অ্যানিমিয়া হতে পারে, যা ক্যানসারের একটি পরোক্ষ লক্ষণ।
জীবনযাত্রায় কোন বদল জরুরি?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কোলন ক্যানসার অনেকাংশে একটি ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’। অর্থাৎ, জীবনযাপনে কিছু স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন এনে এর ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
১। খাদ্যাভ্যাসে বদল: খাদ্যতালিকা থেকে লাল মাংস (রেড মিট) এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস (সসেজ, সালামি) বাদ দিন বা পরিমাণে কমান। পরিবর্তে ফাইবার বা খাদ্য আঁশযুক্ত খাবার, যেমন- তাজা ফল, শাকসবজি, বিনস এবং গোটা শস্য (হোল গ্রেন) বেশি করে খান। ফাইবার হজমশক্তিকে উন্নত করে এবং মলাশয়কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
২। নিয়মিত শরীরচর্চা: সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের শরীরচর্চা করুন। যেমন- দ্রুত হাঁটা বা সাইকেল চালানো। শারীরিক পরিশ্রম ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি হজম প্রক্রিয়াকেও সক্রিয় রাখে।
৩। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: শরীরের অতিরিক্ত ওজন, বিশেষত পেটের মেদ, কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
আরও পড়ুন: ৩ মিনিটে ভাঙা হাড় জুড়ে যাবে! যুগান্তকারী ‘আঠা’ আবিষ্কার চীনের বিজ্ঞানীদের, বদলে যাবে চিকিৎসাশাস্ত্রের রূপরেখা?
৪। ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ: ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান শুধু ফুসফুস বা লিভার নয়, মলাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকিও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এই বদভ্যাসগুলি ত্যাগ করা অপরিহার্য।
৫। নিয়মিত পরীক্ষা: পঞ্চাশ বছর বয়সের পর প্রত্যেকেরই চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত কোলন ক্যানসারের জন্য স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা করানো উচিত। পরিবারে কারও এই রোগের ইতিহাস থাকলে আরও আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে।
চিকিৎসকদের মতে, কোলন ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। তাই উপসর্গকে অবহেলা না করে সচেতন হওয়াই এই রোগ প্রতিরোধের সেরা উপায়।
