আজকাল ওয়েবডেস্ক: বয়স যে শুধু একটা সংখ্যা, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে জাপান। সূর্যোদয়ের দেশে শতায়ু মানুষের সংখ্যা এক লক্ষের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছে, যা এক নতুন বিশ্বরেকর্ড। সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একটানা গত ৫৫ বছর ধরে শতবর্ষ পেরোনো মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে সে দেশে। কিন্তু কী এমন জাদুকাঠি রয়েছে জাপানিদের হাতে, যা তাঁদের দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনযাপনে সাহায্য করছে? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এর নেপথ্যে রয়েছে তাঁদের সামগ্রিক জীবনযাত্রার বেশ কিছু সনাতন অভ্যাস ও দর্শন।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে

বিশেষজ্ঞদের মতে, জাপানিদের এই দীর্ঘায়ুর নেপথ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে তাঁদের খাদ্যাভ্যাস। জাপানিরা পেটপুরে খান না, বরং তাঁদের সংস্কৃতির অঙ্গ হল ‘হারা হাচি বু’। এই অভ্যাস অনুযায়ী, পেট ৮০ শতাংশ ভর্তি হলেই তাঁরা খাওয়া থামিয়ে দেন। এই সংযম শরীরকে অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্ত রাখে এবং বিপাক প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে সাহায্য করে। তাঁদের খাদ্যতালিকায় থাকে প্রচুর পরিমাণে মাছ, যা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ভান্ডার। এছাড়াও থাকে সামুদ্রিক শৈবাল, সয়াবিন থেকে তৈরি টোফু, মিসো এবং নানা ধরনের মরশুমি সব্জি। লাল মাংসের ব্যবহার থাকে নামমাত্র। এই সুষম এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ খাবার কোষের ক্ষয় রোধ করে এবং বার্ধক্যকে দূরে সরিয়ে রাখে।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল তাঁদের জীবনদর্শন, যা ‘ইকিগাই’ নামে পরিচিত। প্রত্যেক জাপানি নিজের জীবনের একটি ‘ইকিগাই’ বা উদ্দেশ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এই উদ্দেশ্যই তাঁদের প্রতিদিন সকালে বিছানা ছেড়ে উঠতে উৎসাহিত করে। তা সে পেশাগত কাজ হোক বা ব্যক্তিগত কাজ। বাগানের পরিচর্যা, অথবা নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটানো। এই দৈনিক লক্ষ্যমাত্রা মানসিক অবসাদ এবং একাকিত্বকে দূরে রাখে, যা সুস্থ জীবনের অন্যতম চাবিকাঠি।

জাপানিদের দীর্ঘ জীবনের আরও একটি রহস্য হল তাঁদের সক্রিয় জীবনশৈলী। তাঁরা জিমে গিয়ে ভারী শরীরচর্চার বদলে দৈনন্দিন জীবনে হাঁটাচলা এবং হালকা ব্যায়ামের উপর বেশি জোর দেন। বাজার করা, বাগানের কাজ করা বা নিছকই প্রতিবেশীর সঙ্গে গল্প করতে হেঁটে যাওয়া। এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলোই তাঁদের শরীরকে সচল রাখে। বিশেষত বয়স্কদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে

সবশেষে আসে সামাজিক মেলবন্ধনের বিষয়টি। জাপানি সমাজে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন অত্যন্ত দৃঢ়। বয়স্ক ব্যক্তিরা পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বিবেচিত হন। একাকিত্বকে দূরে রাখতে ‘মোয়াই’ নামে এক ধরনের সামাজিক গোষ্ঠী তৈরি হয়, যেখানে প্রতিবেশীরা একসঙ্গে গল্পগুজব করেন, একে অপরের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ান। এই সামাজিক সুরক্ষাবলয় তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখে।
সুতরাং, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা তো বটেই, তার পাশাপাশি জাপানিদের দীর্ঘ জীবনের আসল রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তাঁদের পরিমিত আহার, নিত্যদিনের সক্রিয়তা এবং মজবুত সামাজিক সম্পর্কের মধ্যেই। বিশ্ব যখন বার্ধক্যের ভারে নত, তখন জাপান দেখাচ্ছে শতবর্ষ পেরিয়েও কীভাবে সুস্থ ও হাসিমুখে বাঁচা যায়।