আজকাল ওয়েবডেস্ক: সকাল থেকে রাত, বাড়ির একটার পর একটা কাজ আপনার জন্য সহজ করে চলেছে ওরা। রান্না, খাওয়াদাওয়া থেকে কাপড়কাচা, পেশাগত বা অন্য কাজ, আরাম থেকে বিনোদন, বাসন মাজা থেকে ঘর মোছা- হরেক রকম গ্যাজেট এখন আধুনিক জীবনের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু ওরা যেমন আপনার জীবনে স্বস্তি আনছে, আপনাকেও তো ভাল রাখতে হবে ওদের। সঠিক যত্ন না পেলে গ্যাজেট বিগড়ে যেতে পারে, নষ্ট হতে পারে তার কর্মক্ষমতাও। আর তাতে মুশকিলটা আপনারই! সমস্যা হলে সার্ভিস সেন্টার তো আছেই, কিন্তু প্রতিটা গ্যাজেটকে যত্ন করে ব্যবহার করলে, তার আয়ু যেমন বাড়ে, তেমনই কাজও করে ঠিকমতো। কীভাবে যত্নে রাখবেন রোজকার গ্যাজেটদের, রইল তারই সুলুকসন্ধান। 

মাইক্রোওয়েভ
রান্না করা থেকে চটজলদি প্লেটে হাজির করা গরমাগরম খাবার— সবেতেই এখন ভরসা মাইক্রোওয়েভ। মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলো: 
খাবার গরম করা বা রান্না হয়ে গেলে ঝটপট স্পঞ্জ দিয়ে পরিষ্কার করে নিন ভিতরটা। খাবারের টুকরো ভিতরে থেকে গেলে তা পরের বারে হিটিং সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটায়। 
মাইক্রোওয়েভের পাল্লা আস্তে বন্ধ করুন। এতে তার গায়ে থাকা ইন্টারলক ঠিকমতো কাজ করে। 
খালি থাকা অবস্থায় মাইক্রোওয়েভ চালাবেন না। এতে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে ভিতরটা জ্বলে যেতে পারে। 
ধাতব বাসনপত্র মাইক্রোওয়েভে বসাবেন না। এতে ভিতরে আগুন ধরে যাওয়া বা পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

রেফ্রিজারেটর
খাবারদাবার ভাল রাখতে রেফ্রিজারেটর অর্থাৎ ফ্রিজ ছাড়া চলে নাকি! তাকে ভাল রাখবেন যে ভাবে: 
ফ্রিজে কিছু রাখা বা বার করা হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি তার দরজা বন্ধ করে দিন। বেশি ক্ষণ দরজা খোলা থাকলে বাইরের তাপমাত্রা ভিতরকার ঠান্ডা ভাবে ব্যাঘাত ঘটায়। 
প্রতিবার খেয়াল রাখুন ফ্রিজের দরজা ঠিকমতো বন্ধ হল কিনা। অল্প ফাঁক হয়ে থাকলেও ভিতরের ঠান্ডা বাইরে বেরিয়ে আসে। ফলে বিদ্যুৎ খরচ বেশি হয়। 
সঠিক তাপমাত্রায় ফ্রিজ চালু রাখুন। এতে ভিতরকার কুলিং সিস্টেম ঠিক থাকবে। সাধারণ ভাবে ডিপফ্রিজে মাছমাংস থাকলে তাপমাত্রা -১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং নীচের অংশে ০ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা ভাল। 
ফ্রিজে রাখা খাবারদাবার ঠিকমতো ঢাকা দিয়ে রাখুন। এতে ফ্রিজের দেওয়ালে ময়শ্চার জমা আটকায় এবং খাবারের গন্ধও ফ্রিজের ভিতরে ছড়িয়ে পড়ে না।
খেয়াল রাখুন ফ্রিজের ভিতরের দেওয়ালে থাকা ভেন্টগুলো যেন চাপা পড়ে না যায়। এতে কুলিং সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করবে। 
সিঙ্গল ডোর রেফ্রিজারেটর হলে নিয়মিত ডিফ্রস্ট করতে ভুলবেন না। এছাড়া অবশ্যই কিছু দিন পরপর ফ্রিজের ভিতরটা ভাল করে পরিষ্কার করুন। তাতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। 
একেবারে দেওয়াল ঘেঁষে ফ্রিজ রাখবেন না। অন্তত ১ ইঞ্চি ব্যবধান যেন থাকে। এতে ফ্রিজ থেকে বেরোনো তাপ সহজে বাতাসে মিশতে পারবে। ভিতরকার কুলিং সিস্টেমও ঠিক থাকবে। 

মোবাইল বা ল্যাপটপ
মোবাইল বা ল্যাপটপ ছাড়া রোজকার জীবনে এখন চোখে অন্ধকার দেখেন অনেকেই। তাদের খেয়াল রাখুন এই পথে—
খাবার বা পানীয় থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ দূরে রাখুন। অসাবধানতায় মোবাইল বা ল্যাপটপের উপরে খাবার বা তরল পদার্থ পড়লে দ্রুত পরিষ্কার করুন। 
সাবধানে ব্যবহার করুন। হাত থেকে পড়ে তা ভেঙে গেলে বা ক্ষতি হলে লোকসান আপনারই। সঠিক কভার বা কেস এবং স্ক্রিন গার্ড আপনার মোবাইল বা ল্যাপটপকে বাড়তি সুরক্ষা দেবে। ল্যাপটপ বা মোবাইলের গায়ে ধুলো জমতে দেবেন না। নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। এতে তা টেকসই হবে বেশিদিন। নোংরা হাতে এগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। 
মাঝে মাঝে, অন্তত দিন কয়েকে একবার মোবাইল বা ল্যাপটপ সুইচ অফ করুন। মিনিট পনেরো বিরতি দিয়ে তবেই আবার অন করুন। এতে তাদের কার্যক্ষমতা বাড়বে।
নিয়মিত মোবাইল বা ল্যাপটপে প্রয়োজনীয় আপডেট করুন। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ, ফাংশন বা সফটওয়্যার ডিলিট করতে ভুলবেন না। 
পেনড্রাইভ হোক বা হেডফোনের পিন, কিংবা চার্জার— সঠিক ভাবে প্লাগ ইন করুন সাবধানে। তাড়াহুড়ো করলে গ্যাজেটের ক্ষতি হতে পারে। 
মোবাইল, বিশেষত ল্যাপটপের উপরে অন্য জিনিস চাপিয়ে রাখবেন না। এতে এলসিডি স্ক্রিনের ক্ষতি হয়। 
আগুন তথা বেশি তাপমাত্রা এবং জল থেকে মোবাইল বা ল্যাপটপ দুই-ই দূরে রাখুন।

টেলিভিশন

আজকাল ঘরে ঘরে এলসিডি, এলইডি বা স্মার্ট টিভি। সঠিক যত্নে তাদেরও আয়ু বাড়ে। জেনে নিন কী করবেন। 
টিভি দেখা হয়ে গেলে সবক’টি সুইচ বন্ধ করুন। না দেখলে পুরোপুরি বন্ধ রাখুন। এতে টিভি চলবে বেশি দিন। অনেকেরই কাজ করতে করতে টিভি চালিয়ে রাখা বা টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়ে যায় অজান্তে। 
টিভির সঙ্গে ইনবিল্ট স্টেবিলাইজার না থাকলে অবশ্যই আলাদা করে জুড়ে নিন। ভোল্টেজের ওঠানামায় তা আপনার টিভিকে সুরক্ষিত রাখবে। 
ব্রাইটনেস বা কনট্রাস্ট লেভেল ম্যাক্সিমামে বাড়িয়ে রাখা শুধু টিভির নয়, আপনার চোখেরও ক্ষতি করে। চোখের আরাম হবে এমন মাত্রায় তাদের রাখা জরুরি। অপটিমাল লেভেলে রাখলে আপনার টিভিও ভাল থাকবে। 
ধারালো জিনিসপত্র টিভি থেকে দূরে রাখুন। অসাবধানে টিভি স্ক্রিনের ক্ষতি এড়াতে পারবেন। 
টিভির সঠিক ভেন্টিলেশনের সুযোগ রাখুন যথাযথ ফাঁকা জায়গা রেখে। এতে টিভির আয়ু বাড়বে। 
নিয়মিত নরম কাপড় দিয়ে টিভি মুছে পরিষ্কার রাখুন ধুলো বা ময়শ্চারের হাত থেকে। একটানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি চালিয়ে রাখবেন না। দরকারে মাঝে মাঝে বিরতি নিন। তা না হলে ভিতরকার যন্ত্রপাতি পুড়ে যেতে পারে। 
অতিরিক্ত ঠান্ডা বা কম তাপমাত্রায় টিভি অন রাখবেন না। এতে কনডেনসেশন হয়ে তার ভিতরকার যন্ত্রপাতিতে ময়শ্চার জমতে পারে।

এয়ার কন্ডিশনার
আজকাল গরম পড়তে না পড়তেই এসি-র জন্য ত্রাহিরব শুরু! তার খেয়াল রাখবেন যে ভাবে—
নির্দিষ্ট সময় অন্তর এসি-র সার্ভিসিং করান। নিশ্চিত করুন যাতে তার সমস্ত অংশ ঠিকমতো পরিষ্কার হয়, কনডেনসেশন ড্রেন ঠিক থাকে এবং এয়ার ফিল্টার নিয়মিত পাল্টানো হয়। এতে এসি-র স্বাস্থ্য ভাল থাকে। 
এসি ব্যবহারের সময়ে দরজা-জানলা সঠিক ভাবে বন্ধ রাখুন। তবেই এসি-র কুলিং ঠিকমতো কাজ করবে। 
ঠিকমতো ঠান্ডা এবং আরাম পেতে ঘরের মাপের উপযোগী সাইজের এসি কিনুন। আপনার ঘরের মাপের তুলনায় এসি-র ক্যাপাসিটি যদি কম হয়, তবে ঠিকমতো ঠান্ডা হবে না। সেক্ষেত্রে বেশিক্ষণ এসি চললে বিদ্যুৎ খরচও বাড়বে। খেয়াল রাখুন আপনার ঘরের কোথাও কোনও ছিদ্র বা লিকেজ তৈরি হয়েছে কিনা। হয়ে থাকলে তা দ্রুত মেরামত করুন। তা না হলে এসি আপনার ঘরকে ঠিকমতো ঠান্ডা রাখতে পারবে না। 
এসি-র পাইপের গায়ে ফোম রাবারের ইনসুলেশনটি ঠিক আছে কিনা, নিয়মিত নজরে রাখুন। কোনও রকম ছেঁড়াফাটা নজরে এলে অবশ্যই মেকানিককে ডাকুন। তা না হলে আপনার এসি ঠিকমতো কাজ করবে না। 
ঘরের বাইরে খোলা জায়গায় থাকা ইউনিটটিকে রোদ-ঝড়-বৃষ্টি এবং ধুলো-ময়লা থেকে বাঁচাতে কভার পরিয়ে রাখুন। তবে তা যেন বাতাস চলাচলের পথ বন্ধ না করে।