বৃষ্টি থামতেই মন জুড়ে খুশিয়াল রং। একটু একটু করে শরতের নীল মাখছে আকাশ। এবার পুজোর সাজগোজ ফাইনাল করার পালাও এল বলে! কিন্তু শুধু কি নিজেই সাজবেন? উৎসবের আমেজে আপনার বাড়িরও তো সেজে ওঠার সাধ জাগে। শারদীয়া উপলক্ষে এমনিতেই ঘরদোর পরিষ্কার করে সাজিয়েগুছিয়ে নেয় বাঙালি। এবছর বরং বাড়ির ভোল বদলে তাকেও দিলেন উৎসব সাজ!

বাড়ির সাজের কথা ভাবলে খরচের কথাটাও মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে যায়। ঘরবাড়ি রং বা নতুন আসবাবপত্র তৈরি মানেই যে বড়সড় টাকার ধাক্কা! কিন্তু একটু মাথা খাটালে কম খরচেও কিন্তু বদলে যেতে পারে আপনার বাড়ির চিরচেনা চেহারা। কী করে? তারই বরং সুলুকসন্ধান দেওয়া যাক। 

উৎসবের রংঃ পুজো উপলক্ষে ঘরদোরে নতুন রং করাতে পারলে তো কথাই নেই। খরচের ভয়? মুশকিল আসান ওয়াল পেপার। আপনার ঘরের ধরন, অবস্থান বা আলোর গতিবিধি মাথায় রেখে বাছাই করুন মনের মতো ডিজাইন, প্যাটার্ন বা ছবির ওয়ালপেপার। দেখুন কেমন আমূল বদলে যায় ঘরের চেনা পরিবেশ আর মেজাজ। দেওয়ালের রং যদি মোটামুটি ঠিকঠাক থাকে, তবে বদলে নিতে পারেন পর্দা, বেড কভার, কুশন কভার। গাঢ় রঙের বদলে বেছে নিন প্যাস্টেল শেড বা উজ্জ্বল রং। উৎসবের আমেজ ধরা থাকবে তাতেই।

ছবিই ভাষাঃ ছবি আঁকতে ভালবাসেন? দেওয়াল, জানলা বা দরজায় পছন্দসই ছবি এঁকে নিন মনের মতো রংয়ে। দেওয়ালে হতে পারে নানা ধরনের ওয়াল আর্ট। জানলায় ছবিতেই বুনে দিন ফুল বা লতানে গাছ। কিংবা দরজায় এঁকে নিতে পারেন আল্পনা, ট্রাইবাল আর্টের নকশা কিংবা মানুষের প্রতিকৃতি। ঘরের চেহারাই পাল্টে যাবে। 

আসবাবের নড়াচড়াঃ নতুন আসবাব কিনতে হবে না মোটেই। পুরনোগুলোকেই ঠাঁইনাড়া করে সাজিয়ে নিন নতুন ভাবে। ডিভানের জায়গায় সোফাসেট এল, টেবিলের জায়গায় আলমারি। কিংবা আসবাবের জায়গা অদলবদলে বেরিয়ে এল মাঝের একফালি জায়গা বা ছোট্ট একটা কোণ। সেখানটায় রাখা গেল কার্পেট কিংবা বুককেস। দেখবেন কেমন নতুন লাগে ঘরটাকে!

আলোর আমেজঃ উৎসব মানেই তো আলো। এ বার শারদীয়ায় আপনার বাড়িকে বরং আলোয় সাজিয়ে নিন নতুন করে। অনেক দিনের শখ পূরণ করে বসার ঘরে আসুক একটা ছোট্ট ঝাড়বাতি। কর্নার কাবার্ড বা সেন্টার টেবিলে বসতেই পারে রংবাহারি টেবিলল্যাম্প। ফলস সিলিং থাকলে লাগিয়ে নিতেই পারেন আলোর কায়দা। আলোআঁধারিতে জমে যাবে পুজোর আড্ডা। শুধু অন্দরে নয়, বাড়ির বাইরেটা কিংবা বারান্দা সাজাতে পারেন ফেয়ারি লাইট বা প্রদীপের ধাঁচে চিলতে নরম আলোয়।

টুকিটাকির সজ্জাঃ বসার ঘর কিংবা শোয়ার ঘর, ফটোফ্রেমে সাজিয়ে নিতে পারেন প্রিয় মুহূর্তদের। ঘরের কোনায় বা টেবিলে থাক সুদৃশ্য ফুলদানি, তাতে একরাশ তাজা ফুল। বাড়িতে কাচের বোতল থাকলে রং-তুলি হাতে নিজেই এঁকে নিতে পারেন ছবি বা ডিজাইন। এ ছাড়া ডোকরা কিংবা মাটির পুতুল, ক্রিস্টালের শোপিস, দড়ি কিংবা কাঁথাকাজের ওয়াল হ্যাঙ্গিং— হরেক রকম টুকিটাকি তো আছেই। নামী শিল্পীর দামি ছবির বদলে বাড়ির খুদে সদস্য, নিজের বা কাছের মানুষের আঁকা ছবিকে বাঁধিয়ে দেওয়ালে ঝোলাতেই পারেন। নিজের হাতে তৈরি জিনিসেও সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার অন্দর। তার কিন্ত স্বাদই আলাদা!

সবুজে স্বাগতঃ ঘর সাজাতে গাছের কদরই আলাদা! বারান্দা বা ছাদে ছোট্ট বাগান করতে পারেন। রান্নাঘরের ছড়ানো জানলায় হতেই পারে কিচেন গার্ডেন। আর বসার ঘর, শোওয়ার ঘর, এমনকী স্নানঘরেও থাকল কিছু ইন্ডোর প্ল্যান্ট। সবুজের আবাহন শুধু যে আপনার বাড়িটাকে বদলে দেবে, তা নয়, হয়ে উঠবে আপনাদের সুস্থতারও চাবিকাঠি। আর ছাদবাগানে কিংবা বারান্দায় যখন প্রথম ধরবে কলি, কিংবা বর্ণে-গন্ধে মাতোয়ারা করে দেবে ফুলেরা, দেখবেন কেমন আনন্দ হয়! 

বাড়ি মানে তো স্রেফ চার দেওয়ালের ঘেরাটোপ নয়। বাড়ি আপনার মনের আয়নাও বটে! তাকে সাজালে সে আমেজ ছড়িয়ে যাবে অন্দর থেকে অন্তরে। পুজোয় সে এক বাড়তি পাওনা!