কথায় বলে, মানুষের স্বভাব বড় বিচিত্র। যা কখন, কোন পরিস্থিতিতে বিগড়াবে তা আগে থেকে বলা মুশকিল। অনেকেরই প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে সামান্য বিষয়েই রাগ হয়, অথচ অপরিচিত বা বাইরের কারওর সামনে আচরণ থাকেন শান্ত ও সংযত। এই প্রবণতা কি শুধুই অভ্যাস, নাকি এর পেছনে গভীর মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা আছে? বিশেষজ্ঞদের মতে, এর অন্তত তিনটি বড় কারণ রয়েছে। যা হল-

১. শুধুই রাগ নয়ঃ মানুষের মস্তিষ্ক অপরিচিতদের সঙ্গে আচরণের সময় সবসময় একটি 'মাস্ক' পরে থাকে। সামাজিক শিষ্টাচার মেনে চলা, ভদ্রতা বজায় রাখা-সবকিছুই তখন মাথায় থাকে। কিন্তু প্রিয়জনদের সামনে মস্তিষ্ক নিরাপদবোধ করে। অবচেতনভাবে ধরে নেয়—‘আমি যেমনই আচরণ করি এই মানুষটা আমাকে ত্যাগ করবে না।’ফলে নিজের আসল আবেগ, রাগ বা হতাশা গোপন না রেখে সরাসরি প্রকাশ পায়।

আরও পড়ুনঃ পুজোয় বাড়ি ফিরতে পারেননি বাইরে থাকা সঙ্গী? কীভাবে উৎসবের মাঝেও বজায় রাখবেন ‘লং ডিসট্যান্স’ প্রেম?

২. নৈকট্যের কারণে জমে থাকা বিরক্তিঃ যাঁদের সঙ্গে আমরা বেশি সময় কাটাই, তাঁদের ছোট ছোট আচরণ বা অভ্যাস আমাদের বারবার চোখে পড়ে। প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও, এগুলো ধীরে ধীরে মনের ভেতর জমতে থাকে। যাকে ‘প্রক্সিমিটি ট্রিগার অ্যাকুমুলেশন’ বলা হয়। এর ফলে সামান্য একটি ঘটনায় চেপে রাখা বিরক্তি হঠাৎ বিস্ফোরিত হয়ে রাগ আকারে বেরিয়ে আসে। অপরিচিতদের ক্ষেত্রে এমন হয় না, কারণ তাঁদের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বা বিরক্তির থাকে না।

৩. আবেগ প্রকাশের নিরাপদ মাধ্যমঃ প্রিয়জনদের আমরা প্রায়ই ব্যবহার করি এক ধরনের “ইমোশনাল আউটলেট” হিসেবে। অর্থাৎ সারাদিনের মানসিক চাপ, হতাশা কিংবা অস্থিরতা জমে গিয়ে যাঁদের আমরা সবচেয়ে বিশ্বাস করি, তাঁদের সামনে বিস্ফোরিত হয়। কারণ আমরা জানি তাঁদের কাছে নিজের দুর্বলতা বা রাগ প্রকাশ করলেও সম্পর্ক ভেঙে যাবে না। তাই চাপ ও রাগ নির্ঝঞ্ঝাটভাবে 

মনস্তত্ত্ববিদরা মনে করেন, এই প্রবণতা খুব সাধারণ হলেও সম্পর্কের উপর দীর্ঘমেয়াদে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আত্মনিয়ন্ত্রণ চর্চা করা, রাগ আসার মুহূর্তে সাময়িক বিরতি নেওয়া এবং প্রয়োজনে কাউন্সেলরের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।