আজকাল ওয়েবডেস্ক: শহরের আকাশ ধোঁয়ায় ধূসর, কংক্রিটের জঙ্গলে এক টুকরো সবুজের জন্য মনটা কেমন আনচান করে ওঠে। ফ্ল্যাটবাড়ির জীবনে এক চিলতে বারান্দা বা ছাদই যেন নিঃশ্বাস ফেলার একমাত্র জায়গা। কিন্তু সেই ছোট্ট পরিসরকেই যদি একটু বুদ্ধি করে কাজে লাগানো যায়, তবে তা কেবল চোখের আরাম নয়, হয়ে উঠতে পারে আপনার পরিবারের ‘ঘরোয়া ঔষধালয়’। সামান্য সর্দি-কাশি বা ছোটখাটো শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসকের কাছে ছোটার আগে, একবার ছাদের টবের দিকে তাকালেই মিলতে পারে সমাধান। রইল এমনই পাঁচটি ভেষজ উদ্ভিদের সন্ধান, যা সামান্য যত্নেই আপনার ছাদ বাগানকে ঔষধি গুণে ভরিয়ে তুলবে।
১। তুলসী
 
 বাঙালি বাড়িতে তুলসীর মহিমা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এটি শুধু আধ্যাত্মিক কারণেই পূজনীয় নয়, এর ভেষজ গুণের তালিকাও দীর্ঘ। সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা বা জ্বরের প্রকোপ কমাতে তুলসী পাতার রস অব্যর্থ। প্রতিদিন সকালে কয়েকটি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যায়। টবে এই গাছ লাগানো অত্যন্ত সহজ। রোজকার সামান্য যত্ন আর পর্যাপ্ত সূর্যালোকেই এই গাছ তরতরিয়ে বেড়ে ওঠে।
 
 আরও পড়ুন: পর্ন দেখলে লিঙ্গ শিথিলতার আশঙ্কা বাড়ে? বিস্ফোরক তথ্যে চিন্তা বাড়ালেন গবেষকরা
২। ঘৃতকুমারী (অ্যালো ভেরা)
 
 ত্বক ও চুলের যত্নে এই ‘জাদুকরী’ গাছের কোনও বিকল্প নেই। ঘৃতকুমারীর পাতার ভেতরের স্বচ্ছ শাঁস বা জেল সরাসরি ত্বকে লাগালে রোদে পোড়া ভাব, ব্রণ বা ফুসকুড়ির সমস্যা কমে। চুল পড়া রোধ করতে এবং চুলের গোড়া মজবুত করতেও এর জুড়ি মেলা ভার। এ ছাড়া, এর রস হজমশক্তি উন্নত করতে এবং শরীরকে দূষণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। এই গাছ লাগানোর জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয় না। অল্প জলেই এর প্রয়োজন মেটে, তবে খেয়াল রাখতে হবে টবে যেন জল জমে না থাকে।
৩। থানকুনি
 
 প্রাচীন আয়ুর্বেদের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এই থানকুনি পাতা। পেটের সমস্যা, বিশেষত আমাশয় নিরাময়ে এর কার্যকারিতা বহু পরীক্ষিত। স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতেও এই পাতা অত্যন্ত উপকারী। শরীরের কোথাও কেটে বা ছড়ে গেলে থানকুনি পাতা বেটে লাগালে ক্ষত দ্রুত শুকিয়ে যায়। ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে মাটি এই গাছের জন্য উপযুক্ত। অল্প ছায়াযুক্ত জায়গাতেও এই লতানে গাছ খুব ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।
 
 ৪। পুদিনা
 
 পুদিনার সতেজ গন্ধ মনকে চাঙ্গা করে তোলার জন্য যথেষ্ট। হজমের গন্ডগোল, গ্যাস-অম্বল বা বমি ভাব কাটাতে পুদিনা পাতার রস সঞ্জীবনীর মতো কাজ করে। এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও দারুণ কার্যকর। গরমের দিনে পুদিনার শরবত শরীর ও মনকে শীতল রাখে। এই গাছ খুব দ্রুত ছড়ায়, তাই একটি মাঝারি আকারের টবই এর জন্য যথেষ্ট। নিয়মিত জল দেওয়া ছাড়া এর জন্য বিশেষ কোনও পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।
 
 
৫। লেমনগ্রাস
 
 আধুনিক জীবনযাত্রায় লেমনগ্রাসের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। এর সুগন্ধ যেমন রান্নার স্বাদ বাড়ায়, তেমনই এর ভেষজ গুণও অনেক। লেমনগ্রাস দিয়ে তৈরি চা সর্দি-কাশি ও জ্বর কমাতে সাহায্য করে। এটি মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতেও কার্যকর। এ ছাড়া, এর তীব্র গন্ধ মশার মতো পোকামাকড়কে দূরে রাখতে সাহায্য করে। একটি বড় টবে অনায়াসেই লেমন গ্রাস চাষ করা যায়।
 
 তাহলে আর দেরি কেন? সামান্য পরিশ্রমেই আপনার ছাদ বা বারান্দা হয়ে উঠতে পারে এক টুকরো সবুজ স্বর্গ।
