অনেকেই গর্ব করে বলেন, “যাই হয়ে যাক, প্রতিদিন জিমে গিয়ে কষে শরীরচর্চাটা করা কিন্তু আমি মিস করি না।” কিন্তু সত্যিটা হল, সবসময় নিজেকে ‘পুশ থ্রু’ করা মানেই শৃঙ্খলা নয়, অনেক সময় সেটাই হয়ে ওঠে চোট, বার্নআউট কিংবা দীর্ঘদিনের অনিয়মের সবচেয়ে বড় কারণ। তাই ফিটনেস ট্রেনার আদি ব়্যাড স্পষ্ট করে জানালেন, কোন পরিস্থিতিতে জিম এড়িয়ে যাওয়া আলস্য নয়, বরং বুদ্ধিমানের কাজ।
ইনস্টাগ্রামে তিনি লিখেছেন, “এগুলোই হল আসল স্কিপ-ডে।” তাঁর প্রথম সতর্কবার্তা, অসুস্থ হলে জিম নয়। সাধারণ ক্লান্তি হলে, তা কাটিয়ে শরীরচর্চা করাই যায় কিন্তু জ্বর, ফ্লু, ইনফেকশন থাকলে শরীরকে পুরোপুরি বিশ্রাম দিতে হবে। তিনি জনপ্রিয় অথচ প্রায়ই ভুল বোঝা একটি শরীরচর্চার নিয়ম পরিষ্কার করেন, “অ্যাবভ দ্য নেক =ওকে কিন্তু বিলো দ্য নেক = রেস্ট” অর্থাৎ সামান্য সর্দি থাকলে হালকা ওয়ার্কআউট চলতে পারে, কিন্তু গলার থেকে শরীরের নীচের দিকে অসুস্থতার উপসর্গ হলে কখনওই ব্যায়াম নয়।
শরীরচর্চার সঙ্গে খাবার এবং ঘুমের বিষয়টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। দিনভর না খেয়ে জিমে ঢুকে পড়া শরীরের প্রতি অন্যায়। এতে শক্তি কমে যায়, চোটের ঝুঁকি বাড়ে। আদি ব়্যাডের মতে, প্রথমে কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনযুক্ত সঠিক খাবার নেওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তারপর ট্রেনিং। ঘুমের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা, এক রাত খারাপ ঘুম হলে চলবে, কিন্তু একেবারেই না ঘুমোলে জিম না যাওয়াই নিরাপদ।
শরীরে ব্যথা নিয়ে জিমে ‘নায়কোচিত’ ব্যাপার-স্যাপার দেখানো তিনি একেবারেই সমর্থন করেননি। সাধারণ পেশির ব্যথার সঙ্গে তীব্র, গভীর বা হাড়ের ব্যথার পার্থক্য বোঝা জরুরি। তাঁর পরামর্শ, “ ছোট থাকা সত্বেও ব্যায়াম করা কখনওই উচিত নয় ”তবে তার মানে নড়াচড়া পুরো বন্ধ করা নয়, ব্যথাহীন বিকল্প হালকা ট্রেনিং করা যেতেই পারে।
এ নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতও রয়েছে। হেয়ারনাও অফিসিয়ালের সিনিয়র ফিটনেস কনসালট্যান্ট সাধনা সিং জানান, ‘অ্যাবাভ দ্য নেক’ নীতি সাধারণ গাইডলাইন হলেও এটাকে কখনও ‘মেডিক্যাল পারমিশন’ হিসেবে নেবেন না। জ্বর, শরীরব্যথা, বুক জ্বালা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা - এগুলো থাকলে সম্পূর্ণ বিশ্রাম জরুরি, না হলে সুস্থ হতে দেরি তো হবেই, হৃদ্যন্ত্রের উপর বাড়তি চাপও পড়তে পারে।
ঘুমের অভাব, পুষ্টিহীনতা ও তীব্র মানসিক চাপ থাকলে তা ব্যায়ামের সময় ফোকাস ও শরীরের নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে চোটের সম্ভাবনা ভয়ঙ্করভাবে বাড়ায় বলেও সতর্ক করেন তিনি। আর সবচেয়ে বড় ইঙ্গিত, হঠাৎ শক্তি কমে যাওয়া, বারবার ক্লান্ত হওয়া, খিদে না পাওয়া, মুড খারাপ থাকা - এই সব লক্ষণ দেখলে শরীর আসলে বিশ্রামই চায়।
সংক্ষেপে বার্তাটা পরিষ্কার, ফিটনেস মানে শুধু ‘কঠোর পরিশ্রম’ নয়। নিজের শরীরের ভাষা বোঝার ক্ষমতাই সবচেয়ে বড় স্মার্টনেস।
