আজকাল ফ্যাটি লিভারের সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে। এই রোগে যকৃতের ভেতরে অতি মাত্রায় চর্বি জমে যায়, যা প্রথম দিকে বোঝা যায় না বললেই চলে। তবে শরীর ধীরে ধীরে কিছু অদ্ভুত সংকেত দিতে শুরু করে যেগুলো সহজে ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ না ভেবে অনেকেই অবহেলা করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো এই উপসর্গগুলো চিনে ফেললে ফ্যাটি লিভারের বিপদ এড়ানো সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড, মদ্যপান, স্থূলতা এবং অনিয়মিত ঘুম-এগুলো ফ্যাটি লিভারের প্রধান কারণ। এই অবস্থায় যকৃতের চর্বি জমে গিয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং সময়ের সঙ্গে তা লিভার সিরোসিস বা ক্যানসারের রূপও নিতে পারে।

ফ্যাটি লিভারের অস্বাভাবিক লক্ষণ

১. বমিভাব ও হজমের সমস্যা: ফ্যাটি লিভার আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কিন্তু উপেক্ষিত উপসর্গ হল বমিভাব। তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার পর অস্বস্তি, পেট ফুলে যাওয়া, পেটে ভারীভাব- সবই এর লক্ষণ। আসলে যকৃত যখন স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না, তখন চর্বি ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় পিত্তরস যথাযথভাবে তৈরি হয় না। ফলে এই লক্ষণ দেখা দেয়।

২️. জয়েন্টে ব্যথা বা আথ্রাইটিসের মতো উপসর্গ: ফ্যাটি লিভারও জন্যও জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে। যকৃতে চর্বি জমলে শরীরে প্রদাহ বেড়ে যায়। এই প্রদাহ জয়েন্টের তরল পদার্থে প্রভাব ফেলে এবং ব্যথা, জড়তা বা পেট ফুলে যাওয়ার সমস্যা তৈরি করে।

৩️. বুক জ্বালা বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স: পাচনক্রিয়া গতি কমে গেলে খাবার পাকস্থলীতে বেশি সময় ধরে থাকে, ফলে অ্যাসিড উপরে উঠে বুক জ্বালার মতো অস্বস্তি তৈরি করে। নিয়মিত বুক জ্বালা বা টক ঢেকুর ফ্যাটি লিভারের ইঙ্গিত হতে পারে।

৪️. সবসময় ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা: যকৃত আমাদের শরীরের প্রধান ডিটক্স অঙ্গ। যখন এটি চর্বির ভারে দুর্বল হয়ে যায়, তখন টক্সিন ফিল্টার করার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে শরীরে ভারী লাগা, মনোসংযোগের ঘাটতি এবং সবসময় ক্লান্ত বোধ হয়।

৫️. পেটের ডান দিকের উপরের অংশে অস্বস্তি বা ব্যথা: যকৃত ফোলা বা আকারে বড় হয়ে গেলে, পেটের ডান দিকের উপরের অংশে টান ধরা বা চাপ অনুভব হতে পারে। অনেক সময় এটি খাবারের পর আরও বেড়ে যায়। এই লক্ষণ প্রাথমিক পর্যায়ে যকৃতের প্রদাহের স্পষ্ট সংকেত।

৬️. ত্বক ও চোখে হলুদভাব আসা: যদি ফ্যাটি লিভার এডভ্যান্স পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন যকৃত বিলিরুবিন প্রক্রিয়া করতে ব্যর্থ হয়। এতে চোখের সাদা অংশ ও ত্বকে হলদে ভাব আসে, প্রস্রাবের রং গাঢ় হয় এবং শরীরে চুলকানি দেখা দেয়। এটি লিভারের রোগের সতর্কবার্তা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ওজন নিয়ন্ত্রণ, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা এবং সবুজ শাকসবজি, ফল ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়াই ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধের সবচেয়ে ভাল উপায়। এছাড়া প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের ব্যায়াম যকৃতকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।ফ্যাটি লিভার প্রথমে নিঃশব্দে আঘাত হানে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই শরীরের ছোট ছোট অস্বস্তিকে অবহেলা না করে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো জরুরি।