আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিসিসিআইয়ের সাজানো-গোছানো অধিনায়কত্বের রোডম্যাপ আচমকাই এসে পড়ল এক অপ্রত্যাশিত মোড়ে।
বিসিসিআই সচিব দেবজিত সাইকিয়া শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে নিশ্চিত করেন, ফর্ম নিয়ে উদ্বেগের কারণে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাচ্ছেন না শুভমান গিল।
এর ফলে কার্যত থমকে গেল গিলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হওয়ার স্বপ্ন। এই সিদ্ধান্তে একদিকে যেমন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, বর্তমানে নাম বা তারকাখ্যাতির চেয়ে পারফরম্যান্সই শেষ কথা অন্যদিকে একই সঙ্গে এই ঘটনা টিম ম্যানেজমেন্টকে আবারও এক পুরনো সমস্যার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
আগামী বছরের মার্চে বিশ্বকাপ শেষ হলেই সূর্যকুমার যাদবের পর টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক কে হবেন তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। মনে করা হচ্ছে, উত্তর খুঁজতে ফের ড্রয়িং বোর্ডে ফিরতে হবে নির্বাচকদের।
গত সেপ্টেম্বরে ৩৫ বছরে পা রাখা সূর্যকুমার যাদবের ক্ষেত্রে ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই সম্ভবত শেষ আইসিসি ইভেন্ট হতে চলেছে।
চলতি বছরের শুরুতে ইংল্যান্ড সফরে শুভমান গিলের উত্থান বিসিসিআইকে ভাবতে বাধ্য করেছিল তিন ফরম্যাটে এক অধিনায়ক রাখা যায় কিনা।
অধিনায়ক হিসেবে প্রথম দায়িত্বে নেমেই ব্যাট হাতে একাধিক রেকর্ড ভেঙেছিলেন গিল। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অবসরের পর বদলের মধ্য দিয়ে যাওয়া এক তরুণ দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা অর্জন করেছিলেন।
ইংল্যান্ড সিরিজ শেষ হওয়ার পর অনেকেই নিশ্চিত ছিলেন, ভবিষ্যতের নেতা খুঁজে পেয়েছে ভারত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে না থাকলেও এবং দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি না খেলেও এশিয়া কাপে তাঁকে দলে ফেরানো হয়। শুধু তাই নয়, দেওয়া হয় সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব।
এরপর রোহিত শর্মার জায়গায় ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে গিলের নাম ঘোষণায় আরও স্পষ্ট হয়ে যায় বড় পরিকল্পনার ইঙ্গিত। কিন্তু সুযোগের সঙ্গে প্রত্যাশার বোঝাও বেড়েছিল।
ওপেনার হিসেবে তাঁকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যাক করা হয় টিম ম্যানেজমেন্টের তরফে। তবুও গিলের পারফরম্যান্সে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি।
প্রত্যাবর্তনের পর ১৫টি ইনিংসে গিলের রান মাত্র ২৯১, নেই একটিও অর্ধশতরান। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি সিরিজে (৪, ০ ও ২৮) ব্যর্থতার পর নির্বাচকেরা সিদ্ধান্ত নেন।
জানা যাচ্ছে, লখনউয়ে চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ কুয়াশার কারণে বাতিল হওয়ার পরই নাকি গিলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিরিজের শেষ ম্যাচে ওপেনার হিসেবে ফেরানো হয় সঞ্জু স্যামসনকে।
তাঁর ২২ বলে ৩৭ রানের ইনিংসে জবাবও পেয়ে যায় টিম ম্যানেজমেন্ট। এখন প্রশ্ন একটাই, সূর্যকুমার যাদবের পরে কে নেতৃত্ব দেবেন ভারতকে?
গিল ছিটকে যাওয়ার পর ইংল্যান্ড সফর (জুলাই) পর্যন্ত সময় নিয়ে নতুন অধিনায়ক খোঁজার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচক কমিটি ও টিম ম্যানেজমেন্ট।
তবে বিশ্বকাপে ভাল পারফরম্যান্স করলেও সূর্যকুমারের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত নয়। ২০২৮ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় তাঁর বয়স হবে ৩৭, ফলে পরবর্তী বিশ্বকাপে তাঁকে দেখা যাবে কি না, তা অনিশ্চিত।
এই পরিস্থিতিতে আলোচনায় উঠে এসেছেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। রোহিত শর্মা অধিনায়ক থাকাকালীন একাধিকবার স্ট্যান্ড-ইন ক্যাপ্টেনের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে হার্দিককে।
২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সহ-অধিনায়কও ছিলেন তিনি। গুজরাট টাইটান্সকে আইপিএল জেতানো এবং মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হিসেবে অভিজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেছিলেন, রোহিতের অবসরের পর তিনিই হবেন স্বাভাবিক উত্তরসূরি।
তবে ফিটনেস ও ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের কারণে সে সময় তাঁর পথ আটকে যায়। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। ফিটনেসে উন্নতি, ধারাবাহিক পারফরম্যান্স এবং ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার বিসিসিআই নির্দেশ মেনে চলায় ফের দলে ফিরেছেন হার্দিক।
সাদা বলের ক্রিকেটেই তাঁর মূল ফোকাস। ফলে আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে তিনি চর্চায় থাকবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
