আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের জনসংখ্যা দেড়শো কোটির দিকে এগোচ্ছে, কিন্তু আজও যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে ঢাক ঢাক গুড়গুড় চলতে থাকে সমাজে। আর হস্তমৈথুনের প্রসঙ্গ উঠলে তো কথাই নেই। অনেকেই কানে আঙুল দেন। আর এই সুযোগেই কিছু মানুষ সমাজমাধ্যমে যা খুশি তাই কথা প্রচার করেন যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে। ইউটিউব বা ফেসবুক খুললে হামেশাই দেখতে পাওয়া যায় কোনও এক স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞ পডকাস্টে বসে জানাচ্ছেন, হস্তমৈথুন করা খুবই খারাপ কাজ। এতে নাকি মারাত্মক ভাবে কমে যায় পুরুষদের যৌন হরমোন টেস্টোস্টেরন!
এই দাবি শুধু অদ্ভুত নয়, সম্পূর্ণ ভুল। হস্তমৈথুন দেহে টেস্টোস্টেরনের মাত্রার উপর দীর্ঘমেয়াদী কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব তো পড়েই না উল্টে স্বল্পমেয়াদী ভাবে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ায়।
১. ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ক্যারোলিনা স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষণা: ১৯৭৬ সালে এই গবেষণাটি করেন গবেষক হার্বার্ট ই. ইভারসন এবং সহকর্মীরা। এই গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বীর্যস্খলনের পর টেস্টোস্টেরনের মাত্রায় তাৎক্ষণিক কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। গবেষকরা নিয়মিত বীর্যস্খলনের অভ্যাস আছে এমন পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এবং দীর্ঘমেয়াদী কোনও উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখতে পাননি।
২. কিন্ডাই ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন, জাপানের গবেষণা: গবেষক টি. সুগা এবং সহকর্মীরা ২০০৮ সালে এই গবেষণা চালান। এই গবেষণায় দেখা যায় যে পাঁচ দিনের জন্য বীর্যপাত থেকে বিরত থাকার পর টেস্টোস্টেরনের মাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পায়, তবে এরপর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে বীর্যপাত টেস্টোস্টেরনের ওঠানামার উপর কোনও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে না।
৩. ফুকুওকা ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ মেডিসিন, জাপানের গবেষণা: ইয়োশিতাকা কোবোরি এবং সহকর্মীরা ২০২০ সালে এই গবেষণা করেন। এই গবেষণাটিতে দেখা গিয়েছে যে হস্তমৈথুনের সময় টেস্টোস্টেরনের মাত্রা সাময়িক ভাবে বৃদ্ধি পায় এবং বীর্যস্খলনের ১০ মিনিটের মধ্যেই তা আগের স্তরে নেমে আসে।
৪. ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট অস্টিনের গবেষণা: গবেষক জোসেফ টি. উইলিয়ামস এবং সহকর্মীরা ২০১৫ সালে এই গবেষণা করেন। এই গবেষণায় দেখা যায় নিয়মিত যৌন কার্যকলাপ (যার মধ্যে হস্তমৈথুনও অন্তর্ভুক্ত) পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। এমন কোনও প্রমাণ পাননি যা নির্দেশ করে যে হস্তমৈথুন দীর্ঘমেয়াদীভাবে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
কাজেই নেটমাধ্যমে যাই দেখবেন, তা অন্ধভাবে বিশ্বাস করবেন না। এখন প্রযুক্তির দৌলতে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন গবেষণাপত্র নিজেই পড়ে নেওয়া যায়। কিংবা যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে কিছু জানার থাকলে সরাসরি চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করুন। ইউটিউব দেখে প্রবঞ্চকের পাল্লায় পড়বেন না।
