আজকাল ওয়েবডেস্ক: ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের নেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর প্রতিবেশী দেশজুড়ে ব্যাপক অস্থিরতা শুরু হয়েছে। তার মধ্যেই এই নির্মম হত্যার ঘটনা ঘটল।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অনুসারে, নিহত যুবকের নাম দীপু চন্দ্র দাস। তিনি ভালুকা উপজেলার ডুবালিয়া পাড়া এলাকায় ভাড়া থাকতেন। দীপু একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় মানুষজন দীপুর বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্মের নবী মহম্মদ সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগ তুলেছেন। রাত নয়'টা নাগাদ উত্তেজিত জনতা ওই যুবকের উপর হামলা চালায়।
প্রশাসন জানিয়েছে, জনতা দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করে তাঁর মৃতদেহ একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং মৃতদেটি উদ্ধার করে।
ময়নমনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহটি পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, তারা নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে এবং আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হলেই আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা শরিফ ওসমান হাদির। আততায়ীদের গুলিতেই নিহত হন ওসমান। ইনকেলাব মঞ্চের নেতা হাদির মৃত্যুর পর বাংলাদেশে হিংসা, বিক্ষোভ ও অস্থিরতার বাড়ছে। তার মধ্যে দীপু দাসের মৃত্যু বেশ তাৎপর্যবাহী।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের একজন প্রার্থী ছিলেন হাদি। ছয় দিন চিকিৎসার পর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। গত সপ্তাহে ঢাকায় তাঁর নির্বাচনী প্রচারের সময় মুখোশধারী হামলাকারীরা হাদিকে মাথায় গুলি করেছিল।
তার মৃত্যুর খবর বৃহস্পতিবার ব্যাপক অস্থিরতার জন্ম দেয়। বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসে, সংবাদপত্রের কার্যালয় লক্ষ্য করে হামলা চলে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাসভবন ৩২ ধানমন্ডিতে ভাঙচুর করা হয়। এই অস্থিরতার সময় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার বাড়ি ও কার্যালয়েও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চট্টগ্রামে রাত দেড়টা নাগাদ বিক্ষোভকারীরা ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনে ইট ও পাথর ছোড়ে, তবে কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
কর্তৃপক্ষ কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। ১২ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরা সহকারী হাইকমিশনারকে আশ্বস্ত করেছেন যে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা হাদির হত্যাকারীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য নয়াদিল্লিকে দায়ী করে ভারতবিরোধী স্লোগান দেয় এবং সন্দেহভাজনদের হস্তান্তর না করা পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতীয় হাইকমিশন বন্ধ করে দেবে বলে দাবি জানায়।
জাতির উদ্দেশে ভাষণে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস হাদির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার অঙ্গীকার করে বলেন, হত্যাকারীদের প্রতি কোনও সহানুভূতি দেখানো হবে না।
