আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঝাল-ঝাল কষা মাংস হোক বা তেল-লঙ্কা দিয়ে মাখা মুড়ি, জমিয়ে খাওয়ার সময় কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা প্রায় সব বাঙালিরই রয়েছে। অনেকেই বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলেই ধরে নেন। কিন্তু সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে ও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি ধারণা ছড়িয়েছে যে, ঝাল খাবার খাওয়ার সময় এই অতিরিক্ত ঘাম হওয়া নাকি কিডনির সমস্যার পূর্ব লক্ষণ হতে পারে।
কিডনির সমস্যাকে ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়, কারণ এই সমস্যা সহজে ধরা পড়ে না। ফলে এই সামান্য লক্ষণটিও অনেকের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এই ধারণা কতটা সত্যি? চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলছে?
ঘাম কেন হয়?
প্রথমেই বোঝা দরকার, ঝাল খেলে আমরা ঘেমে যাই কেন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এর পিছনে রয়েছে লঙ্কায় থাকা ‘ক্যাপসাইসিন’ নামক একটি রাসায়নিক যৌগ। এই ক্যাপসাইসিন যখন আমাদের জিভের সংস্পর্শে আসে, তখন তা মস্তিষ্কের তাপ সংবেদী স্নায়ু কোষকে উত্তেজিত করে। মস্তিষ্ক তখন একধরনের প্রদাহের সঙ্কেত পায় এবং ভাবে শরীরের তাপমাত্রা হয়তো বেড়ে গিয়েছে। শরীরকে ঠান্ডা করার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে মস্তিষ্ক তখন ঘর্মগ্রন্থিগুলিকে সক্রিয় করে তোলে, যার ফলে আমরা ঘামতে শুরু করি। এই প্রক্রিয়াটির একটি গালভরা নামও রয়েছে- ‘গাস্টেটরি সোয়েটিং’। চিকিৎসকদের মতে, এটি একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া।
কিডনির সমস্যার সঙ্গে কি আদৌ কোনও যোগ রয়েছে?
এই প্রশ্নের উত্তরে নেফ্রোলজিস্ট বা কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞরা প্রায় একবাক্যে জানাচ্ছেন, ঝাল খাওয়ার পর ঘাম হওয়াকে সরাসরি কিডনির সমস্যার লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। কিডনির সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণগুলি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
কী দেখে চেনা যাবে কিডনির সমস্যা?
১। পা, গোড়ালি বা মুখের অংশ ফুলে যাওয়া (ইডিমা)।
২। প্রস্রাবের পরিমাণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন (খুব কম বা খুব বেশি)।
৩। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বা ফেনা হওয়া।
৪। অত্যধিক ক্লান্তি ও দুর্বলতা।
৫। খিদে কমে যাওয়া এবং বমি বমি ভাব।
৬। ত্বকে চুলকানি ও র্যাশ।
৭। উচ্চ রক্তচাপ।
আরও পড়ুন: পর্ন দেখলে লিঙ্গ শিথিলতার আশঙ্কা বাড়ে? বিস্ফোরক তথ্যে চিন্তা বাড়ালেন গবেষকরা
বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন যে, কিডনি বিকল হতে শুরু করলে এই লক্ষণগুলিই মূলত প্রকাশ পায়। সাধারণ ভাবে ঝাল খেয়ে ঘাম হওয়া এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত নয়।
কখন সতর্ক হবেন?
তবে কি এই ঘাম নিয়ে একেবারেই ভাবার কিছু নেই? চিকিৎসকদের মতে, কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা প্রয়োজন। যদি দেখা যায়, শুধু ঝাল খাবার নয়, সামান্য বা সব ধরনের খাবার খাওয়ার সময়েই আপনি অস্বাভাবিক পরিমাণে ঘামছেন, তবে তা স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যার (অটোনমিক নিউরোপ্যাথি) লক্ষণ হতে পারে, যা ডায়াবিটিস বা অন্য কোনও রোগের কারণে হয়। গুরুতর কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর স্নায়ুতন্ত্রেও প্রভাব পড়তে পারে, কিন্তু সেটি রোগের অনেক জটিল পর্যায়। সুতরাং, শুধু ঝাল খেয়ে ঘাম হলে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু যদি এর সঙ্গে কিডনির রোগের অন্য কোনও উপসর্গ (যেমন পা ফোলা, প্রস্রাবের সমস্যা) দেখা দেয় অথবা ঘামের ধরন হঠাৎ করে বদলে যায়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মনে রাখবেন, শরীর কোনও অস্বাভাবিক সঙ্কেত দিলে তাকে অবহেলা করা উচিত নয়, কিন্তু ভিত্তিহীন উদ্বেগে ভোগাও ঠিক নয়। সঠিক তথ্যের জন্য সর্বদা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
