আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিনদিন দিন ছোট হয়ে আসছে! ঠিকই পড়ছেন। কোনও কাব্যিক কথা নয়, এমনটাই বলছে বিজ্ঞান। পৃথিবী নিজের মেরুদণ্ডের উপর একবার পাক খেলে এক দিন সম্পন্ন হয়। সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, পৃথিবী এখন তার স্বাভাবিক গতির চেয়ে একটু বেশি দ্রুত ঘুরছে। ফলে একেকটি দিন কয়েক মিলিসেকেন্ড (হাজার ভাগের এক সেকেন্ড) করে ছোট হয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন এতটাই সূক্ষ্ম যে সাধারণ মানুষ টের পাচ্ছেন না। কিন্তু বিজ্ঞানীদের চোখ এড়ানো কঠিন। আর বিষয়টি ধরা পড়তেই উদ্বেগ ছড়িয়েছে তাঁদের মধ্যে। আপাত ভাবে সামান্য মনে হলেও সময়ের এই সূক্ষ্ম হেরফের ভবিষ্যতে প্রযুক্তির দুনিয়ায় বড় জটিলতা তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
২০২০ সালে প্রথমবার বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন, পৃথিবী আগের তুলনায় একটু তাড়াতাড়ি ঘুরছে। ২০২০ সালের ২৯ জুলাই ছিল গত অর্ধশতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে ছোট দিন। ওই দিন ২৪ ঘণ্টার চেয়ে ১.৪৬ মিলিসেকেন্ড কমেই নিজের অক্ষে পাক খায় পৃথিবী। এখানেই শেষ নয়, এরপর ২০২২ সালের ২৯ জুলাই আরও আরেকটি রেকর্ড তৈরি হয়। সেদিন পৃথিবী পুরোনো রেকর্ড ভেঙে ১.৫৯ মিলিসেকেন্ড কম সময়ে একটি পূর্ণ দিন সম্পন্ন করে। অর্থাৎ, পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি ক্রমেই বাড়ছে।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
এই তথ্য উঠে এসেছে ইন্টারন্যাশনাল আর্থ রোটেশন অ্যান্ড রেফারেন্স সিস্টেমস সার্ভিস বা আইইআরএস-এর গবেষণায়। এ ছাড়াও, ব্রিটেনের জাতীয় সময় পরিমাপক প্রতিষ্ঠান এবং ফেসবুকের মূল সংস্থা মেটা-র বিজ্ঞানীরাও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছেন। 
কেন এমন হচ্ছে?
বিজ্ঞানীদের মতে, এর পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে।
১. ভূপৃষ্ঠের কাঠামোগত পরিবর্তন: ভূমিকম্প বা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে পৃথিবীর ভরের ভারসাম্য বদলাচ্ছে। সেকারণে এই দ্রুত ঘূর্ণন ঘটতে পারে।
২. হিমবাহের গলন: বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে ক্রমশ মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের জলে রূপান্তরিত হচ্ছে। ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠে ওজনের পুনর্বণ্টন ঘটছে।
৩. বায়ুমণ্ডল ও সমুদ্রের স্রোতের পরিবর্তন: একই ভাবে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে পরিবর্তন হচ্ছে এই বিষয়গুলির। এই পরিবর্তন পৃথিবীর ঘূর্ণনকে প্রভাবিত করতে পারে।
কী প্রভাব পড়বে দৈনন্দিন জীবনে?
এই সূক্ষ্ম পরিবর্তন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তেমন কোনও সমস্যা তৈরি না করলেও, স্থাননির্ণয় ব্যবস্থাপনা (জিপিএস সিস্টেম), উপগ্রহ নির্ভর প্রযুক্তি, ইন্টারনেট সার্ভার এবং ব্যাংকিং সফটওয়্যার-এর মতো অত্যন্ত সূক্ষ্ম সময়নির্ভর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
এই পরিস্থিতি যদি স্থায়ী ভাবে চলতে থাকে, তাহলে বিজ্ঞানীদের ‘নেগেটিভ লিপ সেকেন্ড’ অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা থেকে এক সেকেন্ড বাদ দেওয়ার মতো পদক্ষেপও নিতে হতে পারে। এখনও পর্যন্ত এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। তাই ২৪ ঘণ্টা থেকে ১ সেকেন্ড বাদ দিলে প্রযুক্তির দুনিয়ায় একেবারে নতুন ও জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
পৃথিবীর ঘূর্ণনের এই সূক্ষ্ম পরিবর্তন আপাতদৃষ্টিতে তেমন বিপদজনক না হলেও, বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন সবাইকে। কারণ এই প্রবণতা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে সময়ের হিসেব-নিকেশে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।