আজকাল ওয়েবডেস্ক: এবারের কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে বিশেষ আহার ও আচরণবিধি পালনের পরামর্শ দিয়েছেন জ্যোতিষ ও আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা। ভাদ্র মাসের অমাবস্যা বিশেষ পবিত্র বলে মনে করা হয়। এ বছর কৌশিকী অমাবস্যা শুরু হবে শুক্রবার সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটে এবং চলবে শনিবার সকাল ১১টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত। এই তিথিতে নিয়ম মেনে ব্রত ও উপবাস পালন করলে জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে, দুর্ভাগ্য ও সংকট দূর হয়—এমনই বিশ্বাস রয়েছে ভক্তদের মধ্যে।

 

উপবাসকারীরা তো নির্দিষ্ট খাদ্যবিধি মেনেই চলেন, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যাঁরা উপবাসে থাকেন না, তাঁদেরও কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। জ্যোতিষ বিশারদ পণ্ডিত চক্রপাণি ভাট জানিয়েছেন, কৌশিকী অমাবস্যায় কোনওভাবেই আমিষ খাদ্য গ্রহণ করা যাবে না। সাত্ত্বিক খাদ্যেই উপবাস ভঙ্গ করার নিয়ম। এছাড়া এদিন বিউলির ডাল, কচুজাতীয় শাকসবজি, বিট ও গাজরের মতো অমরশুমী সবজি খাওয়া নিষিদ্ধ। একইভাবে শীতকালীন ফুলকপি ও বাঁধাকপিও এই সময়ে হজমের জন্য অনুপযুক্ত হওয়ায় বর্জনীয়।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, মরশুমভিত্তিক এই খাদ্যনিষেধের পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক যুক্তি। শরীরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নির্দিষ্ট খাবার বাদ দিলে রোগব্যাধি এড়ানো সম্ভব, আর সুস্বাস্থ্য বজায় থাকলে জীবনে আর্থিক ও মানসিক অশান্তিও অনেকাংশে দূরে থাকে। তাই ধর্মীয় বিশ্বাসের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও জ্যোতিষবিদ্যার মিলনেই গড়ে উঠেছে এই কৌশিকী অমাবস্যার আহারবিধি।

 

 

পুরাণকথা অনুসারে কৌশিকী অমাবস্যার ইতিহাস দেবী দুর্গার জন্মকথার সঙ্গেই যুক্ত। দেবতারা যখন মহিষাসুরের মতো অসুরদের অত্যাচারে ক্লান্ত, তখন তাঁরা মহাদেব, বিষ্ণু এবং ব্রহ্মার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তিন মহাদেব তাঁদের শক্তির আলো একত্রিত করেন, আর সেই দ্যুতিময় শক্তি থেকেই জন্ম নেন দেবী দুর্গার এক বিশেষ রূপ—কৌশিকী দেবী।

 

কাহিনি আছে, দেবীর শরীর থেকে ঝরে পড়া এক অদ্ভুত কান্তি থেকেই এই কৌশিকী রূপের প্রকাশ ঘটে। সেই জন্যই তাঁর নাম হয় ‘কৌশিকী’। তিনি আবির্ভূত হয়ে অসুরদের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ চালান এবং দেবতাদের মুক্তি দেন। এই বিজয়ের স্মৃতিতেই ভাদ্র মাসের অমাবস্যা ‘কৌশিকী অমাবস্যা’ নামে পরিচিত হয়।

 

লোকবিশ্বাস, এদিন দেবী বিশেষভাবে শক্তিরূপে পৃথিবীতে বিরাজ করেন। তাই ভক্তরা এই দিনে উপবাস, পূজা এবং তন্ত্রসাধনা করে দেবীর কৃপা প্রার্থনা করেন। বলা হয়, কৌশিকী অমাবস্যায় ব্রত পালনে অশুভ শক্তি নাশ হয়, দুঃখ-দারিদ্র দূর হয় এবং জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে।

 

এইভাবে কৌশিকী অমাবস্যা কেবল একটি তিথি নয়, বরং শক্তির জাগরণ ও দেবী মাহাত্ম্যের এক চিরন্তন প্রতীক।

 

 

(অস্বীকৃতি: এই প্রতিবেদন শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের উদ্দেশ্যে লেখা। যেকোনও ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।)