ডায়াবেটিসকে বলা হয় ‘নীরব ঘাতক’। রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে শুরু করলেও বেশিরভাগ সময়েই শরীর কোনও ম্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় না। তবে ত্বকে অর্থাৎ আমাদের চামড়া অনেক আগেই এই সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকা, রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা—এই সব মিলিয়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন ত্বকজনিত সমস্যায় ভোগেন। কিছু ক্ষেত্রে এই ত্বকের পরিবর্তন ডায়াবেটিসের আগাম সতর্কতার লক্ষণ হতে পারে। ঠিক সময়ে ত্বকের সেইসব লক্ষণ বুঝে সতর্ক হলেই ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
১. পায়ের সামনের দিকের বাদামী দাগঃ ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথি নামের এই অবস্থা সাধারণত পায়ের সামনের দিকের চামড়ায় দেখা যায়। ছোট গোলাকার বাদামি বা লালচে দাগ অনেক সময়ই মানুষ গুরুত্ব দেন না। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্তে শর্করা বেড়ে ক্ষুদ্র রক্তনালীর ক্ষতি হলে এই দাগ তৈরি হয়, যা ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ।
২. ঘাড়-বাহুমূলে কালো রেশযুক্ত দাগঃ ঘাড়ের পিছনে বা বগলে যদি গাঢ়, রুক্ষ, ভেলভেটের মতো প্যাচ দেখা দেয়, তবে তা অ্যাকান্থোসিস নিগ্রিকানস। এটি সাধারণত ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের সূচক অর্থাৎ শরীর ইনসুলিন ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারছে না। ওজন বাড়া, হরমোনের অসামঞ্জস্য এবং প্রিডায়াবেটিসের সঙ্গে এটি গভীরভাবে যুক্ত।
৩. পিঠ–কাঁধের চামড়া শক্ত হয়ে যাওয়াঃ ডায়াবেটিস দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণে না থাকলে অনেকের ত্বক ধীরে ধীরে শক্ত, ঘন ও টান টান হয়ে যায়। স্ক্লেরডিমা নামে পরিচিত। এই অবস্থায় কাঁধ বা পিঠ নড়াচড়া করতেও অস্বস্তি হয়। ডায়াবেটিসের এই ইঙ্গিত অবহেলা করলে জটিলতা বাড়তে পারে।
৪. ক্ষত সারতে দেরি হওয়াঃ উচ্চ রক্তশর্করার কারণে রক্তসঞ্চালন কমে যায়, ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়। ফলে ক্ষুদ্র কাটাছেঁড়া দ্রুত শুকায় না, বরং সংক্রমণ বাড়ে। বিশেষ করে পায়ের ক্ষত এড়িয়ে গেলে ডায়াবেটিক ফুট আলসারে পরিণত হতে পারে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
৫. হঠাৎ হলুদ দানা ওঠাঃ রক্তে শর্করার পাশাপাশি ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে গেলে ত্বকে ছোট ছোট কষ্টদায়ক হলুদ দানা দেখা যায়। ইরাপটিভ জ্যান্থোমাস নামের এই লক্ষণটি সাধারণত উরু, হাতে গুচ্ছাকারে হয় এবং এটি শরীরে লিপিড–বিকৃতির মারাত্মক সংকেত।
৬. চোখের পলকে হলুদ প্যাচঃ চোখের পলকের ওপর হলুদ চর্বিযুক্ত প্যাচ বা ঘাড়ে দাগ, উভয়ই রক্তে অতিরিক্ত চর্বি ও শর্করার ইঙ্গিত হতে পারে। এগুলো অনেকে সৌন্দর্যের সমস্যা মনে করলেও বাস্তবে মেটাবলিক সতর্কবার্তা।
