বিশ্বজুড়ে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত আক্রান্তের নিরিখে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। সুগারের সমস্যা থাকলে কার্বোহাইড্রেট বিশেষ করে ভাত কম পরিমাণে খাওয়ার প্রচলিত ধারণা রয়েছে। কিন্তু বাঙালিদের যে এক বেলা ভাত না খেলে ঠিক মন ভরে না। তবে সত্যি কি ভাত খেলে বাড়ে ব্লাড সুগার? বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাত খাওয়া খারাপ নয়, ভুল হল ভাত রান্না ও খাওয়ার পদ্ধতি।

ভাত রান্নায় একটি সহজ নিয়ম মেনে চললে রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়। বিষয়টি শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, এর পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা।


আসলে ভাত মূলত স্টার্চে ভরপুর। আমরা যখন গরম ভাত খাই, তখন সেই স্টার্চ খুব দ্রুত হজম হয়ে শরীরে গ্লুকোজে পরিণত হয়। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। কিন্তু যদি এই স্টার্চের গঠন সামান্য বদলে দেওয়া যায়, তাহলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।


পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী, ভাত সাধারণ নিয়মেই রান্না করতে হবে। এরপর সেই ভাত সঙ্গে সঙ্গে না খেয়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঠান্ডা করে রাখতে হবে। ভাত ঠান্ডা হলে তার ভিতরের স্টার্চের কিছু অংশ বদলে গিয়ে তৈরি হয় রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ। এই রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ সহজে হজম হয় না, বরং ফাইবারের মতো আচরণ করে। শরীরে গ্লুকোজ ধীরে ধীরে প্রবেশ করে। ফলে ভাত খাওয়ার পর রক্তে চিনির মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যায় না। শুধু তাই নয়, এই রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও সাহায্য করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরার অনুভূতি দেয়।

অনেকেই ভাবেন, ঠান্ডা ভাত মানেই বুঝি বাসি বা অস্বাস্থ্যকর। কিন্তু এখানে বিষয়টি আলাদা। পরিষ্কারভাবে রান্না করা ভাত যদি ঢেকে ফ্রিজে বা সঠিক জায়গায় রাখা হয়, তাহলে সেটি স্বাস্থ্যসম্মতভাবেই খেলে কোনও ক্ষতি নেই। খাওয়ার আগে চাইলে হালকা গরম করেও নেওয়া যেতে পারে, তাতেও এই উপকারিতা নষ্ট হয় না।


এই পদ্ধতি শুধু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নয়, বরং যাঁরা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাঁদের জন্যও কার্যকর। ভাত পুরোপুরি বাদ না দিয়ে, এইভাবে খেলেই বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। অর্থাৎ ঠিকভাবে রান্না ও ঠান্ডা করে খেলে ভাতই হতে পারে স্বাস্থ্যকর খাবার।

&t=82s