আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রেম নিঃসন্দেহে এক স্বর্গীয় অনুভব। কিন্তু বিবাহিত বা সম্পর্কে আবদ্ধ থাকার পরও অন্য কারও প্রতি আকৃষ্ট হওয়া সমাজে নৈতিক বিচ্যুতি হিসেবে বিবেচিত হয়। তবুও এমন ঘটনা নিত্যদিন ঘটছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে রয়েছে একাধিক মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক কারণ। মনোবিদরা বলছেন, মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যে রয়েছে ‘নতুন’ ও ‘আকর্ষণীয়’ কিছু খোঁজার প্রবণতা। অনেকেই বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতি দুর্বল হন, যা থেকে জন্ম নেয় শারীরিক আকর্ষণ। যদি সম্পর্কের গভীরে ভালবাসার বদলে গড়ন বা সৌন্দর্যের মূল্যায়ন বেশি হয়, তবে সে সম্পর্ক সহজেই একঘেয়ে হয়ে ওঠে এবং মন অন্য কারও দিকে ছুটে যায়। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো সময়ের অভাব। আধুনিক জীবনের ব্যস্ততায় অনেকেই নিজেদের সঙ্গীকে যথেষ্ট সময় দিতে পারেন না। ফলে মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়। এই দূরত্বই অনেক সময় অন্য কারও প্রতি আগ্রহের জন্ম দেয়।
আরও পড়ুন: গত পাঁচ দশকে মুরগির ওজন বেড়েছে ৩৬৪%: উৎপাদন বাড়লেও প্রশ্ন উঠছে নৈতিকতা ও পরিবেশ নিয়ে
কেবল তাই নয়, সম্পর্কের ভিত নড়বড়ে করে তোলে একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস ও সন্দেহ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সম্পর্কের মাঝে যখন গোপনীয়তা বাড়ে, তখন সন্দেহের বীজ অঙ্কুরিত হয়। এই অবিশ্বাসই ধীরে ধীরে তিক্ততার সৃষ্টি করে এবং মানুষ অন্য কোথাও মানসিক আশ্রয় খুঁজতে শুরু করে। মনোবিদরা বলছেন, “যেকোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে মানসিক উপলব্ধি, সময় দেওয়া এবং খোলামেলা আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্কের মাঝে যদি প্রেমের পাশাপাশি বন্ধুত্ব থাকে, তবে বাইরের টান কমে যায়।” সম্পর্কে একঘেয়েমি কাটিয়ে তুলতে সঙ্গীর সঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। হতে পারে সেটা একসঙ্গে ভ্রমণ, রান্না করা বা স্রেফ সন্ধ্যাবেলা হাঁটতে যাওয়া। পাশাপাশি একে অপরের অনুভূতিকে শ্রদ্ধা ও গুরুত্ব দেওয়াও জরুরি।
আরও পড়ুন: খালি পেটে লেবু জল: আদৌ কি সবার জন্য উপকারী? কী বলছেন চিকিৎসকরা জেনে নিন
সমাজে পরকীয়ার ঘটনাগুলিকে নিছক নৈতিক বিচ্যুতি বলে দূরে ঠেলে না দিয়ে, তার পিছনে থাকা জটিল মনস্তত্ত্ব ও সম্পর্কগত সমস্যাগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন সমাজবিদরাও। সম্পর্ক শুধুই দায়িত্বের নয়, সেটা মানসিক আশ্রয়ের জায়গাও—সেই দিকটায় যত্ন নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে সামাজিক মাধ্যম যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা টিন্ডার—মানুষের কাছে 'বিকল্প' খোঁজার সুযোগ বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। আগে যেখানে একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে সময়, সহনশীলতা ও ধৈর্য প্রয়োজন হতো, এখন কয়েকটি ক্লিকেই গড়ে উঠছে নতুন যোগাযোগ। মনোবিদরা বলছেন, এই সহজলভ্যতা মানুষকে আরও অস্থির ও কমিটমেন্টবিমুখ করে তুলছে। অনেকেই সম্পর্কের জটিলতা বা একঘেয়েমি এড়াতে ‘বিকল্প’ খুঁজে নিতে চাইছেন সামাজিক মাধ্যমে। অপরের প্রশংসা, ইনবক্সে ঘন ঘন মেসেজ, রিয়্যাকশন বা ভিডিও কলে কথোপকথন—সব মিলিয়ে নতুন এক মায়াজালে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকেই। এর ফলেই বাড়ছে পরকীয়ার হার।
