আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভোরবেলা এক গ্লাস লেবু জল খেয়ে দিন শুরু করা—এখন বহু মানুষের দৈনন্দিন রুটিনের অংশ। অনেকে মনে করেন, এটি শরীরকে ডিটক্স করে, হজমশক্তি বাড়ায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—এই অভ্যাস কি সত্যিই সবার জন্য উপকারী? বিশেষজ্ঞরা কিন্তু সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন।দিল্লির জেটিবি হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ অজিত কুমার জানিয়েছেন, খালি পেটে লেবু জল পান করার আগে কয়েকটি বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে যাঁরা অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভোগেন, পেট ফাঁপা হয় বা হজমে গণ্ডগোল রয়েছে, তাঁদের জন্য খালি পেটে লেবু জল হতে পারে বিপজ্জনক। এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
একইভাবে, দাঁতের সংবেদনশীলতা যাঁদের রয়েছে—মানে ঠান্ডা বা টক খেলে দাঁতে শিরশির করে—তাঁদেরও সাবধান থাকা দরকার। কারণ লেবুর টক রস দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে। চিকিৎসক পরামর্শ দেন, এই ধরনের ব্যক্তিরা লেবু জল পান করার সময় স্ট্র ব্যবহার করুন এবং পরে অবশ্যই মুখ ধুয়ে ফেলুন পরিষ্কার জল দিয়ে। ডাঃ কুমারের আরও পরামর্শ, লেবু জল বানানোর সময় অতিরিক্ত লেবুর রস ব্যবহার করা উচিত নয়। অতিরিক্ত টক জাতীয় পানীয় শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। হালকা গরম জলে লেবু মিশিয়ে খেলে তুলনামূলকভাবে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও, যাঁদের কিডনি সমস্যার ইতিহাস রয়েছে, লো ব্লাড প্রেসার বা লেবুতে অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে, তাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই পানীয় গ্রহণ করা উচিত নয়। সব মিলিয়ে, লেবু জল স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো হলেও, তা সবার জন্য নয়। কারও দেখাদেখি নয়, শরীরের চাহিদা বুঝে এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করেই এই অভ্যাস শুরু করা উচিত। কারণ, শরীরের প্রাথমিক সতর্ক সংকেত উপেক্ষা করলে ক্ষতির সম্ভাবনাও কিন্তু কম নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লেবু একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এতে রয়েছে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ফ্ল্যাভোনয়েডসহ নানা উপকারী উপাদান। নিয়মিত ও সঠিক মাত্রায় লেবু সেবনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ত্বক উজ্জ্বল থাকে এবং হজমশক্তি উন্নত হয়। তবে এই উপকারিতা তখনই কার্যকর যখন এটি সঠিক নিয়মে গ্রহণ করা হয়। লেবু জল খালি পেটে পান করার সময় অতিরিক্ত রস বা চিনি না মেশানোই ভালো। কেউ কেউ মধু মিশিয়ে খেয়ে থাকেন, তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে তা না করাই ভালো। এছাড়া, লেবু জলে নিয়মিত লবণ মেশালে সোডিয়াম মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। ফলে লেবু নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা না করে, দেহের প্রয়োজন ও অবস্থা বুঝে গ্রহণ করাই সর্বোত্তম।
