আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত পাঁচ দশকে খাওয়ার জন্য পালিত মুরগির গড় ওজন প্রায় ৩৬৪ শতাংশ বেড়েছে। ১৯৭০-এর দশকে যেখানে একটি সাধারণ ব্রয়লার মুরগির ওজন ছিল গড়ে ২ পাউন্ডের মতো, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৯ পাউন্ডেরও বেশি। এই বিশাল পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে নির্বাচিত প্রজনন, উন্নত শিল্পচাষ পদ্ধতি, খাদ্য ব্যবস্থার অপ্টিমাইজেশন এবং অর্থনৈতিক চাহিদা। বিশেষ করে 'কর্নিশ ক্রস' প্রজাতির মতো উচ্চ ফলনশীল ব্রয়লার জাতগুলি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে খুব অল্প সময়ে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পায়। এই দ্রুত ওজন বৃদ্ধির পেছনে খাদ্যে পুষ্টির পরিমাণ বাড়ানো, পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ এবং কিছু ক্ষেত্রে হরমোন ব্যবহারের কথাও উঠে এসেছে।
ফলে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বড় আকারের মুরগি, বিশেষ করে বেশি বুকের মাংসবিশিষ্ট জাত, সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে। তবে এই প্রবণতা ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন। পশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলি বলছে, দ্রুত ওজন বৃদ্ধির ফলে এই মুরগিগুলোর শরীরে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে—যেমন হাঁটার অক্ষমতা, হাড় ভাঙা, হৃদযন্ত্রের জটিলতা ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রেই মুরগির ওজন এত বেড়ে যায় যে তার শরীর নিজের ওজন বহন করতেও অক্ষম হয়ে পড়ে। এছাড়াও, মাংসের গুণগত মান, স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তদুপরি, শিল্পভিত্তিক বৃহৎ পরিসরের খামারগুলো থেকে পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ, জলদূষণ ও জমির অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
আরও পড়ুন: স্তনের 'আকারে' মন ভরেনি! গভীর রাতে পুলিশ ডাকলেন পর্যটক!
এই পরিস্থিতিতে প্রাণী কল্যাণ, টেকসই কৃষি ও নৈতিক খাদ্যাভ্যাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। যদিও পোলট্রি শিল্প এখনও উৎপাদন ও দক্ষতার ওপর জোর দিচ্ছে, তবুও এখন নৈতিকতা ও পরিবেশ রক্ষার দিকটিও গুরুত্ব পাচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে USDA বা বিভিন্ন পশু অধিকার সংগঠনের প্রকাশিত কৃষি সংক্রান্ত রিপোর্টগুলি অনুসন্ধান করা যেতে পারে।
বর্তমানে অনেক খামারে পোল্ট্রি মুর্গির দ্রুত ওজন বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত সার, রাসায়নিক এবং কখনও কখনও স্টেরয়েড জাতীয় হরমোন প্রয়োগ করা হচ্ছে। এসব উপাদান মুর্গির শরীরে দ্রুত চর্বি ও মাংস বাড়ালেও, তা মানবদেহে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এসব রাসায়নিক মাংস খেলে মানুষের হরমোন ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে, কিডনি ও লিভারের উপর বাড়তি চাপ পড়ে, এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। শিশুদের মধ্যে অকাল বার্ধক্যগামিতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। ফলে স্বাস্থ্যসচেতন অনেকেই এখন অর্গানিক বা প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন।
