আজকাল ওয়েবডেস্ক: কমলা ভাসিন একবার জোর গলায় বলেছিলেন, ‘কে বলেছে সমাজের সম্মান নারীদের যোনিতে লুকিয়ে আছে?’ এহেন কথার কারণ ছিল, কীভাবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কাউকে অপমান করতে হলে নারীদের সম্মান ভূলুণ্ঠিত করা হয়। কিছুটা সেকারনেই কথায় কথায় মা-বোন-মেয়েকে নিয়ে অশালীন গালিগালাজ করা একটি বড় অংশের মানুষের অভ্যাস। দৈনন্দিন জীবনে এই কদর্য ভাষার ব্যবহার সমাজের কতটা গভীরে ছড়িয়েছে, তার এক চাঞ্চল্যকর এবং উদ্বেগজনক ছবি উঠে এল সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায়। হরিয়ানার বিখ্যাত সমাজসেবী সংগঠন ‘সেলফি উইথ ডটার ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক সুনীল জাগলানের সমীক্ষা অনুযায়ী, হরিয়ানার ৬২ শতাংশ মানুষ তাঁদের কথাবার্তায় মা, বোন ও কন্যাদের নিশানা করে অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার করেন।
তবে লজ্জার এই দৌড়ে হরিয়ানার থেকেও এগিয়ে রয়েছে দেশের রাজধানী দিল্লি। সমীক্ষা বলছে, দিল্লিতে মা-বোন নিয়ে গালিগালাজ করার এই হার সর্বোচ্চ, প্রায় ৮০ শতাংশ। অর্থাৎ, রাজধানীর প্রতি ১০ জন মানুষের মধ্যে ৮ জনই এই ধরনের কদর্য ভাষায় অভ্যস্ত। ‘গালি বন্ধ ঘর’ (গালিগালাজ মুক্ত বাড়ি) নামক প্রচার অভিযানের অধীনে দেশ জুড়ে চালানো এই সমীক্ষায় দিল্লির পরেই রয়েছে পঞ্জাব (৭৮%)। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের চিত্রও প্রায় একই, দুই রাজ্যেই এই হার ৭৪ শতাংশ। সামান্য পিছিয়ে রয়েছে রাজস্থান (৬৮%)।
আরও পড়ুন: ১২ জন স্ত্রী! বাচ্চা করাই নেশা! ১০২ সন্তানের বাবা হয়ে অবশেষে থামলেন ৬৮-র মুসা, কেন ক্ষান্ত দিলেন? কী বললেন এ যুগের ধৃতরাষ্ট্র?
আরও পড়ুন: ‘ধরবে নাকি?’ বিরাট পুরুষাঙ্গ দুলিয়ে কুপ্রস্তাব দেন বিখ্যাত ‘খান’! বলিউডের অন্ধকার দিক নিয়ে বিস্ফোরক শার্লিন চোপড়া
এই সমীক্ষার কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। দেখা গিয়েছে, এই কদর্য ভাষার ব্যবহার সবচেয়ে কম জম্মু ও কাশ্মীরে, মাত্র ১৫ শতাংশ। এরপরেই রয়েছে ওড়িশা, তেলঙ্গানা, বাংলা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি। সেখানে পরিস্থিতি এতটা খারাপ নয়। গত ১১ বছর ধরে চালানো এই সমীক্ষায় সারা দেশের প্রায় ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিভিন্ন পেশার মানুষ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারাও ছিলেন।
সমীক্ষার সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্যটি হল, প্রায় ৩০ শতাংশ মহিলা ও তরুণীরা নিজেরাও এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করেন কিংবা অন্যের মুখে শুনলেও তার প্রতিবাদ করেন না। অর্থাৎ বিষয়টিকে নারী পুরুষ নির্বিশেষে গোটা সমাজেই স্বাভাবিক বলেই মেনে নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। অধ্যাপক সুনীল জাগলানের মতে, এই প্রবণতার নেপথ্যে বর্তমানে অনলাইন গেম, সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থাকতে পারে। তাঁর কথায়, “আজকের তরুণ প্রজন্ম এই মাধ্যমগুলি থেকে যা শিখছে, তাদের আচরণে ও ভাষাতেও তার প্রতিফলন ঘটছে। এর ফলে অশ্রাব্য গালিগালাজ ক্রমশ দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠছে, যা এক গভীর সামাজিক অবক্ষয়ের লক্ষণ।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিসংখ্যান শুধু ভাষার অবক্ষয়কেই তুলে ধরে না, বরং সমাজে মহিলাদের প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতার অভাবকেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। যে ভাষায় মা-বোনের সম্মানহানি এত সহজ, সেই সমাজ সামগ্রিকভাবে কতটা সুরক্ষিত, সেই প্রশ্নই যেন আরও একবার সবার সামনে তুলে ধরল এই সমীক্ষা। ‘গালি বন্ধ ঘর’ অভিযানের লক্ষ্য এই মানসিকতার বিরুদ্ধেই জনমত তৈরি করা।
