রাজস্থানের এক প্রত্যন্ত গ্রামে জিয়ারাম জাট নামটি এখনও আতঙ্কের সৃষ্টি করে। জিয়ারাম রাজস্থানের বার্মার গ্রামে ‘আইবুড়ো জামাই’ নামে পরিচিত। ৫৫টি পরিবারে সুখ নষ্ট করেছে সে। সামাজিক প্রথা, অন্ধকার রীতি এবং সামাজিক মৌনতার সুযোগে নিজের কার্যসিদ্ধি করত সে। রাতের অন্ধকারে বাড়িতে প্রবেশ করে নববধূর সঙ্গে মিলনের পরেই গয়না এবং মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে যেত সে। সমাজের ভয়ে পরিবারের লোকেরাও মুখ বন্ধ করে রাখতেন।
2
7
জিয়ারামের পদ্ধতি সিনেমার খলনায়কদেক চেয়েও ভয়াবহ ছিস। বার্মার এবং জয়সলমেরের নির্জন এলাকার বাড়িগুলিকে নিশানা করত সে। সেই বাড়ির মেয়েরা বিয়ের প্রথম বাড়িতে ফিরত। সেই সময় বাড়িতে বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না, তেমনই পর্দপ্রথাও প্রচলিত ছিল। সেই সুযোগে রাতের অন্ধকারে ঘরে প্রবেশ করে নিজেকে নববধূর স্বামী হিসেবে পরিচয় দিত। তার আগে সারাদিন গোটা এলাকা রেইকি করত নিজের শিকারের খোঁজে।
3
7
আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বধূর ঘরে ঢুকে পড়ত জিয়ারাম। সামাজিক রীতিনীতির ভয়ে কেউ প্রশ্ন করার সাহস পেতেন না। বাড়ির সকলে ঘুমিয়ে পড়লে জিয়ারাম সকলের দেহ থেকে সোনা এবং রুপোর গয়না সরিয়ে ফেলত, লকার খালি করে দিয়ে হাওয়া হয়ে যেত। ঘুম ভাঙলে বাড়ির লোকজন টের পেতেন যে, যাঁকে জামাই আদর করে রাখা হয়েছিল সে আদপে একজন দুষ্কৃতী।
4
7
রাজস্থান পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী, জিয়ারামের বিরুদ্ধে চুরি, অনুপ্রবেশ এবং হেনস্থা-সহ মোট ১৭টি মামলা রয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দা এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞদের অনুমান, জিয়ারামের শিকার ৫৫টিরও বেশি মহিলা এবং তাঁর পরিবার।
5
7
সেই সময় সামাজিক লজ্জা এবং মুখরক্ষার দায়ে অনেকেই বিষয়টি চেপে যেতেন। এমনকি প্রতিবেশীরাও ঘুণাক্ষরে কিছু জানতে পারত না। বহু পরিবার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতেন না। এর ফলে বহু মহিলাকে জীবনের বাকি সময় এই লজ্জা এবং মানসিক আঘাত বয়ে যেতে হয়েছে।
6
7
১৯৮৮ সালে জিয়ারামের নামে প্রথম অভিযোগ দায়ের করা হয়। ১৯৯৪ সালে পুলিশ তাঁকে দাগী আসামি হিসেবে ঘোষণা করে। বারবার জেলের ঘানি টানা সত্ত্বেও, ছাড়া পেয়ে ফের একই কাজে ফিরে যেত সে।
7
7
২০০৩ সাল পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল পুলিশকে। বার বার জেল খাটায় তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়ে যায়। অবশেষে ২০১৬ সালে ফুসফুসজনিত সমস্যার কারণে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুর পরেও জিয়ারামের আতঙ্ক আজও তাঁরা করে বেরায় বার্মার এবং জয়সলমেরের বাসিন্দাদের।