আজকাল ওয়েবডেস্ক: পুজোর নিরামিষ বাজার মানেই রঙিন সবজির মেলা। আর সেই মেলায় ফুলকপির সাদা ধবধবে উপস্থিতি বহু যুগ ধরেই বাঙালির মন জয় করে আসছে। ডালনা, ভাজা, শিঙাড়া বা রোস্ট– ফুলকপির অবাধ বিচরণ রান্নাঘরের সর্বত্র। কিন্তু গত কয়েক দশকে তার এক বিদেশি তুতো ভাই, সবুজ রঙের ব্রকলি, রীতিমতো স্বাস্থ্যসচেতন ভারতীয়দের রান্নাঘরে ভাগ বসিয়েছে। দেখতে প্রায় এক, কিন্তু দামে ও গুণে কে এগিয়ে? ভারতীয়দের জন্য কোনটি বেশি উপকারী? এই নিয়ে পুষ্টিবিদদের মধ্যে আলোচনার শেষ নেই।
 
 আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
 
 পুষ্টিগুণের লড়াইয়ে কে কোথায় দাঁড়িয়ে?
 
 যদি পুষ্টির দিক থেকে বিচার করা হয়, তবে ব্রকলি সামান্য এগিয়ে থাকবে। ব্রকলিকে বলা হয় 'সুপারফুড'। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, এবং ভিটামিন এ। এক কাপ ব্রকলি দৈনিক ভিটামিন সি-র চাহিদার প্রায় ১৩৫% এবং ভিটামিন কে-র ১১৬% পূরণ করতে পারে। এই দু’টি ভিটামিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এছাড়াও ব্রকলিতে রয়েছে ‘সালফোরাফেন’ নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
 
 অন্যদিকে, ফুলকপিও কিন্তু গুণের ভাণ্ডার। এতেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কে রয়েছে, যদিও ব্রকলির তুলনায় কিছুটা কম। তবে ফুলকপির একটি বিশেষত্ব হল এতে 'কোলিন' নামক একটি পুষ্টি উপাদান থাকে, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও, ফুলকপিতে রয়েছে ইন্ডোল-৩-কার্বিনল নামক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা কোষকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়।
 
 আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
 
 ভারতীয়দের জন্য কোনটি বেশি বাস্তবসম্মত?
 
 পুষ্টির বিচার ছেড়ে যদি আমরা ভারতীয়দের খাদ্যাভ্যাস এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতার দিকে তাকানো হয়, তাহলে ছবিটা কিছুটা বদলে যায়।
 
 ১। দাম ও সহজলভ্যতা: ভারতে ফুলকপি প্রায় সর্বত্র এবং সারা বছরই পাওয়া যায়, বিশেষত শীতকালে এর দাম থাকে একেবারে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে। তুলনায় ব্রকলির দাম অনেকটাই বেশি এবং সব বাজারে সহজলভ্যও নয়। তাই রোজকার পাতে রাখার জন্য ফুলকপি অনেক বেশি বাস্তবসম্মত।
 
 ২। রান্নার ধরন: ফুলকপি ভারতীয় রান্নার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঝোল, ঝাল, অম্বল থেকে শুরু করে পরোটার পুর হিসেবেও এর ব্যবহার রয়েছে। ব্রকলি মূলত স্যুপ, স্যালাড বা স্টার-ফ্রাইয়ের মতো আধুনিক রান্নায় বেশি ব্যবহৃত হয়। যদিও এখন অনেক বাঙালি রান্নাতেও ব্রকলি ব্যবহার করা হচ্ছে, তবুও ফুলকপির মতো এর জনপ্রিয়তা এখনও তৈরি হয়নি।
 
 ৩। হজমশক্তি: কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ব্রকলি হজম করা ফুলকপির চেয়ে কঠিন হতে পারে এবং গ্যাসের সমস্যা তৈরি করতে পারে। ফুলকপি তুলনামূলকভাবে সহজপাচ্য।
 
 
সব মিলিয়ে পুষ্টিগুণের নিরিখে ব্রকলি সামান্য এগিয়ে থাকলেও, ভারতীয়দের জন্য ফুলকপিকে কোনও ভাবেই খাটো করে দেখা উচিত নয়। দাম, লভ্যতা এবং রান্নার ধরনের বিচারে ফুলকপি এক কথায় অসাধারণ একটি সবজি।
 
 পুষ্টিবিদদের মতে, সেরা উপায় হল কোনও একটিকে বেছে না নিয়ে দু’টিকেই খাদ্যতালিকায় রাখা। যখন পকেট ভারী, তখন ব্রকলি কিনতেই পারেন। কিন্তু রোজকার পুষ্টির চাহিদা মেটাতে আপনার হেঁশেলের বিশ্বস্ত সৈনিক হতেই পারে সহজলভ্য ফুলকপি। আসল কথা হল, পাতে সবুজ বা সাদা যাই রাখুন না কেন, এই ক্রুসিফেরাস পরিবারের সবজি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ হয়েই থাকবে।
