আজকাল ওয়েবডেস্ক: শহর মানে কি শুধুই কংক্রিটের জঙ্গল? সেখানে কি প্রকৃতির কোনও স্থান নেই? এই চিরাচরিত ধারণাকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে ইংল্যান্ডের সমুদ্রতীরের ঝকঝকে শহর ব্রাইটন এবং হোভ। ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে শহরের প্রশাসন এক অভিনব নিয়ম চালু করেছে। পাঁচ মিটারের বেশি উচ্চতার নতুন কোনও বাড়ি তৈরি করতে হলে, সেখানে ব্যবহার করতে হবে ‘বি ব্রিক’ বা মৌমাছির ইট। আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ ইটের মতো দেখতে হলেও এর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সহাবস্থানের এক নতুন দিগন্ত।

কী এই মৌমাছির ইট?
এই বিশেষ ইটগুলি সাধারণ নির্মাণকার্যে ব্যবহৃত ইটের আকারেরই হয়। তবে এর ভিতরে রয়েছে একাধিক সরু ছিদ্র। ব্রিটেনের প্রায় ২৭০ প্রজাতির মৌমাছির অধিকাংশই হল ‘সলিটারি বি’ বা একাকী মৌমাছি। এরা রানি মৌমাছি বা চাকের উপর নির্ভর করে না, বরং গাছের ফাটল, মাটির গর্ত বা পুরানো দেওয়ালের গর্তে একাই বাসা বাঁধে। আধুনিক নিখুঁত নির্মাণশৈলীর কারণে শহরের বাড়িগুলিতে এখন আর সেই সুযোগ নেই। ‘গ্রিন অ্যান্ড ব্লু’ নামক একটি ব্রিটিশ সংস্থা এই সমস্যার সমাধানেই তৈরি করেছে মৌমাছির ইট, যার মধ্যে রয়েছে ওই একাকী মৌমাছিদের বাসা বাঁধার উপযুক্ত ছিদ্র। শহরের বুক থেকে হারিয়ে যেতে বসা পরাগরেণু বাহকদের ফিরিয়ে আনাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।

ব্রাইটন এবং হোভ শহরের পৌরসভার গৃহ নির্মাণ পরিকল্পনা নীতি অনুযায়ী, এই ইট বাধ্যতামূলক করার নেপথ্যে রয়েছে শহুরে জীববৈচিত্র্যকে এক নতুন দিশা দেওয়ার প্রচেষ্টা। প্রচলিত উপায়ে পার্ক বা বাগান তৈরি না করে, দৈনন্দিন স্থাপত্যের মধ্যেই প্রকৃতির জন্য কিছুটা জায়গা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। নির্মাতাদের মতে, আধুনিক মসৃণ দালান মৌমাছিদের বসবাসের অযোগ্য। এই ইট সেই হারিয়ে যাওয়া বাসস্থান ফিরিয়ে দেবে। এর ফলে শুধু মৌমাছিরাই উপকৃত হবে না, শহরের গাছপালা ও ফুলের পরাগমিলন ঘটিয়ে তারা গোটা বাস্তুতন্ত্রেরই উপকার করবে।

তবে এই উদ্যোগ যতটা প্রশংসিত হয়েছে, ততটাই বিতর্কও দানা বেঁধেছে বিষয়টিকে ঘিরে। পরিবেশবিদ এবং বিজ্ঞানীদের একাংশ এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রখ্যাত ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী ডেভ গোলসনের মতে, তিনি এই ইট পরীক্ষা করে দেখেছেন যে এর ছিদ্রগুলি মৌমাছির বাসা বাঁধার জন্য যথেষ্ট গভীর নয়। তাঁর বক্তব্য, অগভীর গর্তে মৌমাছির লার্ভা সুরক্ষিত থাকে না এবং তারা সহজেই শিকারি বা পরজীবীর কবলে পড়তে পারে। ফলে, এই ইট ব্যবহারের উদ্দেশ্য হয়তো মহৎ, কিন্তু তা আদৌ কতটা বিজ্ঞানসম্মত, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর পিঠ জিভ দিয়ে চেটে দেয় পুরুষ, স্ত্রী যদি পাল্টা লেহন করে, তবেই হয় মিলন! পৃথিবীর একমাত্র জীবিত ড্রাগন এরাই
সমালোচনা সত্ত্বেও, ব্রাইটনের এই পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে নগরোন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশ রক্ষার সংঘাত অনিবার্য নয়। একটি ছোট ইটের মাধ্যমেও যে শহরের বুকে প্রকৃতির জন্য দরজা খুলে দেওয়া যায়, তা এই উদ্যোগ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। এই ইট মৌমাছিদের জন্য আদর্শ বাসা হোক বা না হোক, এটি নগর পরিকল্পনাবিদ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে যে সচেতনতা তৈরি করেছে, তার মূল্য অপরিসীম। আগামী দিনে হয়তো এই মডেলকে সামনে রেখেই বিশ্বের অন্যান্য শহরগুলিও কংক্রিটের জঙ্গলে প্রাণের স্পন্দন ফেরানোর পথে হাঁটবে।