আমরা সকলেই কমবেশি কিশমিশ খেতে ভালবাসি। কিন্তু জানেন কি, কিশমিশ খাওয়ার সবচেয়ে উপকারী উপায় কোনটি? কিশমিশ ভিজিয়ে খেলে তা শুধু নানা শারীরিক সমস্যায় সাহায্য করে না, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এবং মেটাবলিজমও দ্রুত কাজ করে। কিশমিশে রয়েছে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফাইবারের মতো জরুরি পুষ্টি উপাদান। জেনে নেওয়া যাক ভেজানো কিশমিশের উপকারিতা এবং কেন শীতকালে এটি আরও বেশি উপকারী হতে পারে।
ভেজানো কিশমিশ কেন বেশি উপকারী?
কিশমিশ ভিজিয়ে রাখলে তার গুণাগুণ আরও বেড়ে যায়। “রাতে কিশমিশ ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে শীতকালের পুষ্টিগুণ আরও উন্নত হয়,” বলেন পুষ্টিবিদ কবিতা দেবগণ। ছ’টি বড় কারণ জানানো হল, কেন শীতে ভেজানো কিশমিশ বেশি খাওয়া উচিত।
হজমে সাহায্য করে
শীতকালে ভারী খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে, যা অনেক সময় হজমে সমস্যা তৈরি করে। পুষ্টিবিদের কথায়, “ঠান্ডায় হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।” ভিজানো কিশমিশে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভের মতো কাজ করে।
জার্নাল অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড হেলথ-এ এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত মলত্যাগে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে কার্যকর। “সকালে গরম জল আর একমুঠো ভেজানো কিশমিশ দিয়ে দিন শুরু করুন। হজম শক্তি ঠিক রাখতে এটি কার্যকর উপায়,” বলেন বিশেষজ্ঞ।
হাড় মজবুত রাখে
শীতের ঠান্ডায় হাড়ে কাঠিন্য দেখা দিতে পারে। তাই এই সময় হাড়কে শক্ত এবং সুস্থ রাখা জরুরি। পুষ্টিবিদ বলেন, “ভেজানো কিশমিশে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড়কে মজবুত রাখে।” নিউট্রিয়েন্টস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায়ও দেখা যায়, কিশমিশ হাড়ের স্বাস্থ্যে সহায়তা করে। ক্যালসিয়াম বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। ইফোর্ট ওপেন রিভিউয়েস-এ একটি সমীক্ষা জানায়, ভেজানো কিশমিশের পুষ্টি উপাদান অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাতে পারে। প্রতিদিন এক টেবিল চামচ ভেজানো কিশমিশ হাড়কে শক্তিশালী রাখতে সহায়ক।
এনার্জি বাড়ায়
শীতকালে ক্লান্তি আসা খুবই সাধারণ। ঠান্ডা আবহাওয়া এবং দিনের দৈর্ঘ্য কমে যাওয়া আমাদের এনার্জি কমিয়ে দেয়। মধ্যাহ্নের ক্লান্তি দূর করতে ভেজানো কিশমিশ দারুণ কাজে আসে। এতে থাকা প্রাকৃতিক ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ দ্রুত শক্তি জোগায়। ফুড রিভিউস ইন্টারন্যাশনালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ভেজানো কিশমিশ শক্তির ভাল উৎস, বিশেষত দীর্ঘ শীতের দুপুরে। কফি খাওয়ার বদলে একমুঠো ভেজানো কিশমিশ খান—এটি মিষ্টি, তৃপ্তিদায়ক এবং এনার্জি লেভেল স্থির রাখতে সাহায্য করে,” জানান তিনি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
শীতকালে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, তাই ইমিউনিটি শক্তিশালী রাখা জরুরি। ভেজানো কিশমিশ ইমিউন সিস্টেম ভালো রাখতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর ভিটামিন সি এবং বি থাকে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
নিউট্রেশন রিসার্চের গবেষণায় দেখা যায়, এই ভিটামিনগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সামান্য পরিমাণ ভেজানো কিশমিশ যোগ করলে শীতে সর্দি-কাশির ঝুঁকি কমে।
লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে
শীতের উৎসবে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার কারণে ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া প্রভাবিত হতে পারে। “ভেজানো কিশমিশ লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে,” জানান পুষ্টিবিদ। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কিশমিশ শরীর থেকে টক্সিন বার করতে সাহায্য করে। এটি লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের স্বাভাবিক পরিষ্কার হওয়ার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে।
রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে
শীতকালে অনেকেই অস্বাভাবিক ক্লান্তি অনুভব করেন, যার অন্যতম কারণ আয়রনের ঘাটতি। রক্তাল্পতা এখন অনেক বেশি দেখা যায় এবং অনেক সময় তা চুপিসারে বাড়তে থাকে। ভেজানো কিশমিশে প্রচুর আয়রন থাকে, যা লাল রক্তকণিকা তৈরিতে প্রয়োজনীয়।
