সম্পর্কে ভালবাসা, যত্ন আর আন্তরিকতা থাকা যেমন জরুরি, তেমনই বিপজ্জনক হতে পারে যখন সেই ভালোবাসা অতিরিক্ত অধিকারবোধে রূপ নেয়। প্রথমদিকে ভাল লাগলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা সম্পর্ককে বিষাক্ত করে তুলতে পারে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, যারা পার্টনারকে সবসময় নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের এই আচরণ সম্পর্কের মধ্যে অবিশ্বাস, মানসিক ক্লান্তি এবং দূরত্ব তৈরি করে। আসলে ভালবাসা কখনও নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং আস্থা ও সম্মানের মেলবন্ধন। অতিরিক্ত অধিকারবোধ সেই সম্পর্ককে ধ্বংস করে দেয়, যেখানে একসময় ছিল ভালবাসা, আনন্দ, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা।
কীভাবে অতিরিক্ত অধিকারবোধে সম্পর্ক নষ্ট হয়
*অবিশ্বাস ও সন্দেহ বাড়ায়: একে অপরের প্রতি আস্থা না রেখে পার্টনারের প্রতিটি কাজ নজরে রাখা প্রেম নয়, বরং ভয় এবং অনিরাপত্তার প্রতিফলন। এতে সম্পর্কের স্বাভাবিক স্বাধীনতা হারিয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ প্রায়ই পার্লারে গিয়ে শ্যাম্পু করেন? সাবধান! ছোট্ট একটি ভুলেই বাড়চ্ছে বিরল স্ট্রোকের ঝুঁকি
*নিয়ন্ত্রণের মানসিকতা: সঙ্গী কী পোশাক পরবে, কার সঙ্গে দেখা করবে, কখন ফোন করবে-এই ধরনের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় ধীরে ধীরে সম্পর্ক ভারসাম্য হারায়।
*আবেগগত ক্লান্তি ও মানসিক চাপ: সম্পর্কে অনেক সময় সারাক্ষণ সন্দেহ, অভিযোগ ও ব্যাখ্যা দিতে দিতে মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে দু'পক্ষই। এর ফলে প্রেমের জায়গায় রয়ে যায় শুধু বিরক্তি ও দুঃখ।
*নিজস্ব পরিসর হারানো: অতিরিক্ত অধিকারবোধে পার্টনাররা বন্ধুবান্ধব বা পরিবার থেকে দূরে সরে যায়। ধীরে ধীরে তাঁদের জীবনে একাকীত্ব ও হতাশা এসে ভর করে।
*আত্মসম্মানহানির ভয়: ক্রমাগত নজরদারি ও প্রশ্নবাণে মানুষ নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারাতে শুরু করে, যা দীর্ঘমেয়াদে আত্মসম্মান নষ্ট করে দেয়।

কীভাবে নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনবেন
*নিজেকে বোঝার চেষ্টা করুন: কেন আপনি এমন আচরণ করছেন? এটা কি পার্টনার হারানোর ভয়, নাকি অতীতের কোনও খারাপ অভিজ্ঞতা? এই কারণগুলো চিহ্নিত করলেই পরিবর্তনের পথ খুলে যাবে।
*খোলামেলা আলোচনা করুন: অভিযোগ নয়, নিজের অনুভূতি জানিয়ে কথা বলুন। 'আমি ভয় তোমাকে হারাতে ভয় পাই', “তুমি যদি একটু সময় দাও, তাহলে শান্ত হব”-সঙ্গীর সঙ্গে এই ধরনের কথায় বোঝাপড়া বাড়ে।
*পারস্পরিক সীমা নির্ধারণ করুন: সম্পর্কের মধ্যে স্বাধীনতা থাকা জরুরি। তাই আগে থেকেই ঠিক করে নিন কোন জায়গায় ব্যক্তিগত পরিসর বজায় রাখা হবে।
*বিশ্বাস গড়ে তুলুন: সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি হল বিশ্বাস। সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা না করে বরং পার্টনারকে স্পেস দিন।
*নিজের প্রতি মনোযোগ দিন: নিজের শখ, কাজ, বন্ধুত্ব ও সময়কে মূল্য দিন। এতে আপনি মানসিকভাবে শক্ত হবেন, আর পার্টনারের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমবে।
*প্রয়োজনে সাহায্য নিন: যদি মনে হয় আপনি নিজে থেকে এই অভ্যাস ছাড়তে পারছেন না, তাহলে মনোবিদ বা কাউন্সেলরের পরামর্শ নিতে পারেন।
