খাদ্যরসিকদের জন্য উদ্বেগজনক এক তথ্য সামনে এসেছে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক সম্মেলনে উপস্থাপিত নতুন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অত্যন্ত ভারী খাবার খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি স্বল্প সময়ের মধ্যেই তীব্রভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট—এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত বড় কোনও খাবার খেলে মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যেই হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা প্রায় চার গুণ বেড়ে যায়।
গবেষকদের মতে, দেহ ভারী খাবারের প্রতিক্রিয়া জানায় ঠিক যেভাবে আকস্মিক মানসিক চাপ বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের সময় জানায়—যা হার্ট অ্যাটাকের সাধারণ পরিচিত ট্রিগার। সকলের ক্ষেত্রে ঝুঁকি সমান নয়, তবে যাদের আগে থেকেই হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বা ডায়াবেটিস রয়েছে, তাঁদের জন্য সতর্কবার্তাটি বিশেষভাবে গুরুতর।
শরীরে কী ঘটে ভারী খাবারের পরে
চিকিৎসকদের ব্যাখ্যা, ক্যালোরি এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটে ভরপুর খাবার পাকস্থলীতে পৌঁছতেই শরীর দ্রুত হজমে সাহায্য করতে বিপুল পরিমাণ রক্তকে পেটের দিকে সরিয়ে দেয়। এর ফলে হৃদপিণ্ডকে দ্রুত এবং জোরে কাজ করতে হয়, রক্তচাপও বেড়ে যায়। একই সঙ্গে রক্তনালী সঙ্কুচিত হতে পারে—যা হার্টের রক্তপ্রবাহকে আরও চাপের মধ্যে ফেলে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এতে ধমনীতে জমে থাকা কোলেস্টেরলের স্তর ফেটে গিয়ে জমাট বাঁধার সম্ভাবনা থাকে, যা হঠাৎ করেই হৃদয়ে রক্তপ্রবাহ থামিয়ে দিতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, স্যাচুরেটেড ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার—যেমন মাখনযুক্ত গ্রেভি বা ভারী আমিষ পদ— রক্তকে সাময়িকভাবে আরও ঘন করে তোলে, ফলে জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
খাবারের পরই বাড়ে ঝুঁকি
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবার খাওয়ার পর ঝুঁকি প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়, যদিও লক্ষণ সবসময় সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় না। হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, রক্তচাপের ওঠানামা এবং রক্ত জমাট বাঁধার অনুকূল পরিবেশ— সব মিলিয়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য তৈরি হয় অতিরিক্ত ঝুঁকির এক সময়কাল।
কারা বেশি সতর্ক হবেন
তবে গবেষকরা বলছেন, ভারী খাবার সব মানুষের জন্য সমানভাবে বিপজ্জনক নয়। সুস্থ মানুষের হৃদযন্ত্র সাধারণত এই অতিরিক্ত চাপ সামলে নিতে পারে। তবুও কার্ডিয়োলজিস্টরা সংযম বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন—হালকা এবং সুষম খাবার বেছে নেওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম এবং হৃদবান্ধব জীবনযাপন বিশেষত তাঁদের জন্য জরুরি, যাঁরা আগেই ঝুঁকির মধ্যে আছেন।
সর্বোপরি, গবেষণাটি মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসই হৃদস্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। অতি ভারী খাবারের সাময়িক আনন্দ কখনও কখনও শরীরকে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দেয়, বিশেষত যাঁদের মধ্যে আগেই ঝুঁকি থাকে। তাই সচেতনতা, মিতাহার এবং সুষম জীবনযাপনই এই ঝুঁকি কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়—যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদয়কে আরও সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।
