আজকাল ওয়েবডেস্ক: আজকের পৃথিবী জীবনে ভরপুর। আমাদের আছে মহাসাগর, শ্বাসযোগ্য বায়ু এবং জীবের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক উপাদানের সঠিক সংমিশ্রণ। কিন্তু পৃথিবী যখন গঠিত হতে শুরু করেছিল, তখন জীবনের জন্য সবচেয়ে মৌলিক কিছু উপাদানই এর অভাব ছিল।
প্রায় সাড়ে ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে সৌরজগৎ গঠনের সময়, এটি তৈরি হয়েছিল এক বিশাল গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘ থেকে। সেই মেঘে ছিল হাইড্রোজেন, কার্বন, সালফারের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা জীবনের জন্য অপরিহার্য। তবে সৌরজগতের সব অংশ সমানভাবে তৈরি হয়নি। ভেতরের অঞ্চল অর্থাৎ সূ্র্যের সবচেয়ে কাছাকাছি অংশ ছিল ভীষণ উত্তপ্ত।
আরও পড়ুন: বাজারের রক্তক্ষরণ চলছেই, সকলের নজরেই জিএসটি বৈঠক
এই তীব্র তাপের কারণে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ উপাদান কখনও কঠিন আকারে রূপ নেয়নি। বরং তারা গ্যাস আকারেই থেকে যায় এবং পর্যাপ্ত সময় টিকে থাকতে পারেনি ছোট ভেতরের গ্রহগুলো যেমন বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল গঠনের উপাদান হিসেবে। ফলে প্রাচীন পৃথিবী মূলত শুষ্ক, পাথুরে পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়েছিল। সৌরজগতের বাইরের ঠান্ডা অংশ থেকে আসা ‘ভেজা’ উপাদানগুলির বড় অংশই এর কাছে অনুপস্থিত ছিল।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে ভাবছেন, ঠিক কখন পৃথিবী সেই উপাদানগুলো পেয়েছিল যেগুলো একদিন জীবনের আবির্ভাব ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল। যদি ভেতরের সৌরজগতে সেগুলো না থাকে, তবে নিশ্চয় অন্য কোথাও থেকে এসেছে। আর যদি পরে এসে থাকে, তাহলে সেটা কবে ঘটেছিল?

গবেষণার নতুন সন্ধান
বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের গবেষকরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে প্রাচীন পৃথিবীর শিলা ও উল্কাপিণ্ড পরীক্ষা করেন। তারা রেডিও-অ্যাক্টিভ আইসোটোপ ব্যবহার করে সময় নির্ণয় করেন বিস্ময়কর নির্ভুলতায়। গবেষক ড. পাস্কাল ক্রুটাশ বলেন, ম্যাঙ্গানিজ রেডিওঅ্যাক্টিভ ক্ষয় প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে উচ্চ-নির্ভুলতার সময় পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল। এই আইসোটোপটি প্রাচীন সৌরজগতে উপস্থিত ছিল এবং প্রায় ৩.৮ মিলিয়ন বছরের অর্ধায়ু নিয়ে ক্রোমিয়াম-৫৩-তে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এই পদ্ধতিতে তারা বিলিয়ন বছরের পুরনো উপাদানের বয়সও এক মিলিয়ন বছরের কম ত্রুটি নিয়ে নির্ণয় করতে সক্ষম হন।
গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে প্রাথমিক পৃথিবী ছিল সম্পূর্ণ শুষ্ক একটি গ্রহ। তবে এক বিদেশি জলের-সমৃদ্ধ গ্রহাণু থিয়া-র সঙ্গে সংঘর্ষই পৃথিবীতে উদ্বায়ী উপাদান নিয়ে আসে, যা পরে জীবনকে সম্ভব করেছে। বিজ্ঞানীরা আগে থেকেই বিশ্বাস করেন, পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম দিকে থিয়া নামক গ্রহ-আকৃতির বস্তু পৃথিবীতে আঘাত করেছিল। এই সংঘর্ষের ফলেই চাঁদের সৃষ্টি হয়েছিল। নতুন গবেষণা বলছে, থিয়াই হয়তো পৃথিবীতে সেই উপাদানগুলো পৌঁছে দিয়েছিল যা সমুদ্র, বায়ুমণ্ডল এবং জীবনের রাসায়নিক ভিত্তি গঠনে প্রয়োজন ছিল।
এই আবিষ্কার দেখায় যে কেবলমাত্র সঠিক স্থানে একটি পাথুরে গ্রহ গঠিত হওয়াই যথেষ্ট নয়। উদ্বায়ী উপাদান কবে ও কোথা থেকে পৌঁছালো। কী ধরণের সংঘর্ষ হলো, এসবই বড় ভূমিকা রাখে। আর এগুলো সবসময় ঘটে না। অনেক গ্রহ হয়তো চিরকাল শুষ্কই থেকে যায়। কেউ কেউ হয়তো অতিরিক্ত আঘাতে ধ্বংস হয়। পৃথিবীর মতো সঠিক সময়ে সঠিক উপাদান পাওয়া হয়তো মহাবিশ্বে অত্যন্ত বিরল ঘটনা।
