আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক অভূতপূর্ব ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে ইজরায়েল  এবং প্যালেস্তিনীয়ান প্রতিরোধ সংগঠন হামাস তার প্রস্তাবিত গাজা ‘শান্তি পরিকল্পনা’র প্রথম ধাপে সম্মতি দিয়েছে। ট্রাম্প বুধবার (স্থানীয় সময়) তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ Truth Social-এ এক পোস্টে লেখেন, “এর অর্থ হলো, খুব শিগগিরই সব বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে এবং ইজরায়েল তাদের সেনা প্রত্যাহার করবে এক সম্মত রেখা পর্যন্ত। এটি একটি শক্তিশালী, বুনিয়াদি  ও চিরস্থায়ী শান্তির পথে প্রথম পদক্ষেপ।”


তিনি আরও লেখেন, “আমরা কাতার, মিশর ও তুরস্কের মধ্যস্থতাকারীদের ধন্যবাদ জানাই, যারা আমাদের সঙ্গে কাজ করে এই ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন ঘটনাটি সম্ভব করেছেন। Blessed are the Peacemakers!” বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এই চুক্তির প্রথম ধাপ আজই (বৃহস্পতিবার) মিশরের রাজধানী কায়রোতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষরিত হবে। গাজা জুড়ে খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই দেখা গেছে অবিশ্বাস ও সাবধানী উদযাপনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এএফপিকে গাজার বাসিন্দা সামের জুদেহ বলেন, “সত্যি বলতে, খবরটা শোনার পর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। আনন্দের কান্না চলে আসে। দুই বছর ধরে বোমাবর্ষণ, আতঙ্ক, ধ্বংস, অপমান আর প্রতিটি মুহূর্তে মৃত্যুভয়ের মধ্যে বেঁচে ছিলাম আমরা।”

আরও পড়ুন: ফের বাজিমাত করলেন ট্রাম্প, ইজরায়েল-হামাসের শান্তি চুক্তি নিয়ে কী পোস্ট করলেন তিনি

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের  সর্বশেষ (৭ অক্টোবর ২০২৫) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দুই বছরে ২০,১৭৯ শিশু নিহত, ১২ লক্ষাধিক মানুষ খাদ্যাভাবের শিকার, এবং ৫৮,৫৫৪ শিশু অনাথ হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, গাজার পরিকাঠামো প্রায় সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে, চিকিৎসা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত, এবং পুনর্গঠন শুরু করতেও বিশাল মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।

মোদির প্রতিক্রিয়া: “নেতানিয়াহুর শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রতিফলন”। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক্স (X)-এ এক পোস্টে মোদি লেখেন, “এটি শুধু শান্তির দিকেই নয়, বরং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রতিফলনও বটে।” তিনি আরও বলেন, “বন্দিদের মুক্তি এবং গাজার মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা বাড়ানো তাদের কিছুটা স্বস্তি এনে দেবে এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথ প্রশস্ত করবে বলে আমরা আশা করি।”

এর আগে চলতি বছর জাতিসংঘে গাজা সংঘাত নিয়ে আনা প্রস্তাবে তিন-চতুর্থাংশ সদস্য রাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি ও মানবিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার পক্ষে ভোট দিলেও ভারত ভোটদানে বিরত ছিল। ভারতের যুক্তি ছিল, “দীর্ঘস্থায়ী শান্তি কেবল প্রত্যক্ষ আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব।” জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই চুক্তিকে “অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এক কূটনৈতিক সাফল্য” বলে অভিহিত করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আমি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে চুক্তির শর্তাবলি সম্পূর্ণরূপে মানার আহ্বান জানাচ্ছি। সব বন্দিকে মর্যাদাপূর্ণভাবে মুক্তি দিতে হবে। স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে হবে। লড়াই একবারে বন্ধ করতে হবে। গাজায় মানবিক ও বাণিজ্যিক সহায়তা অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এই দুর্ভোগের অবসান ঘটাতেই হবে।” গুতেরেস আরও যোগ করেন যে জাতিসংঘ এই চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে, মানবিক ত্রাণ ও পুনর্গঠন কার্যক্রম জোরদার করবে, এবং গাজার জনগণের জন্য বুনিয়াদি সহায়তা অব্যাহত রাখবে।

যদিও চুক্তির ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে এক নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত দেয়, তবুও অনেক বিশ্লেষক সতর্ক করছেন যে বাস্তব প্রয়োগই আসল চ্যালেঞ্জ। হামাস ও ইজরায়েলের  মধ্যকার গভীর অবিশ্বাস, পশ্চিম তীরের রাজনৈতিক জটিলতা, এবং ইজরায়েলের  অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিভাজন—সব মিলিয়ে এই ‘শান্তি’ কতটা স্থায়ী হবে তা এখনো অনিশ্চিত। তবে দুই বছরব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞে বিপর্যস্ত গাজার সাধারণ মানুষদের কাছে, অন্তত আপাতত, এই ঘোষণাই একটুকরো আশার আলো।