আজকাল ওয়েবডেস্ক: এশিয়ার সামরিক পরিমণ্ডল অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়, যেখানে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন মাত্রার বায়ুসামরিক শক্তি ধারণ করে। চীন, রাশিয়া ও ভারতের মতো দেশগুলোর শক্তিশালী বিমানবাহিনী রয়েছে, অন্যদিকে অনেক দেশ প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, বিমান সংখ্যা এবং যুদ্ধ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স ২০২৫ অনুযায়ী, এশিয়ার সামরিক সক্ষমতার একটি বিস্তারিত মূল্যায়ন করা হয়েছে—যার মধ্যে বিমানবাহিনী অন্যতম। নিচে এশিয়ার সাতটি তুলনামূলকভাবে দুর্বল বিমানবাহিনী সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল, যেগুলোর সীমাবদ্ধতা তাদের আধুনিক যুদ্ধ সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।


মায়ানমার:  মায়ানমারের বিমানবাহিনী বর্তমানে মোট ৩১৭টি বিমান পরিচালনা করে, যার মধ্যে মাত্র ৫৮টি যুদ্ধবিমান। এর অধিকাংশই পুরনো প্রজন্মের ফাইটার ও বোম্বার, যেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং আধুনিকীকরণে সমস্যা রয়েছে। পর্যাপ্ত খুচরা যন্ত্রাংশের অভাব ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে কার্যকর বিমান সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থা ও অ্যাভিওনিক্সের ঘাটতি মায়ানমারের বিমানবাহিনীকে আধুনিক আকাশযুদ্ধে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ করছে।


বাংলাদেশ: বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বর্তমানে মোট ২১৪টি বিমান পরিচালনা করে, যার মধ্যে প্রায় ১৩৯টি যুদ্ধ উপযোগী। আধুনিকীকরণের চেষ্টা সত্ত্বেও অনেক বিমানই পুরনো প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। উন্নত রাডার, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম ও আধুনিক অস্ত্রের সীমিত ব্যবহার এর আকাশযুদ্ধ সক্ষমতাকে সীমিত রাখছে। তবে বাংলাদেশ সরকার নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও নতুন বিমান কেনার উদ্যোগের মাধ্যমে বিমানবাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছে।


শ্রীলঙ্কা: শ্রীলঙ্কা বিমানবাহিনী মোট ৮৫টি বিমান পরিচালনা করে, যার মধ্যে বেশিরভাগই বহুমুখী যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার। সীমিত সংখ্যক বিমান ও পুরনো বহরের কারণে তাদের যুদ্ধ প্রস্তুতি তুলনামূলকভাবে দুর্বল। উন্নত ফাইটার জেট ও নির্ভুল আঘাত হানার ক্ষমতার অভাব এর আকাশযুদ্ধ সক্ষমতাকে প্রভাবিত করছে। যদিও তারা মানবিক সহায়তা ও উদ্ধার অভিযানে দক্ষ, তবুও তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা সীমিত।

আরও পড়ুন: পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের অস্বাভাবিক পরিবর্তন, অশুভ ইঙ্গিত দিলেন বিজ্ঞানীরা


লাওস: লাও পিপলস এয়ার ফোর্স এশিয়ার সবচেয়ে ছোট বিমানবাহিনীগুলোর একটি। তাদের মোট বিমান সংখ্যা মাত্র ৩৩টি, যার মধ্যে ২৩টি হেলিকপ্টার। সোভিয়েত যুগের পুরনো বিমানগুলোই প্রধান ভরসা। রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা, প্রশিক্ষিত জনবল ও আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে এর কার্যক্ষমতা খুবই সীমিত। রাডার ও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের অভাবে দেশটি আকাশ প্রতিরক্ষায় দুর্বল।


কম্বোডিয়া: রয়েল কম্বোডিয়ান এয়ার ফোর্স মোট ২৫টি বিমান পরিচালনা করে, যার মধ্যে মাত্র ১৪টি সক্রিয়। অধিকাংশই পরিবহন ও সহায়তামূলক কাজে ব্যবহৃত হয়। কোনও বিশেষ যুদ্ধবিমান বিভাগ নেই এবং আধুনিক রাডার বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় আকাশযুদ্ধে এর ভূমিকা প্রায় নেই বললেই চলে।


নেপাল: নেপাল বিমানবাহিনী প্রধানত পরিবহন, নজরদারি ও উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত। তাদের মোট ১৫টি বিমান, যার মধ্যে মাত্র ৮টি সক্রিয়। আধুনিক ফাইটার জেট ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অভাবে তারা আকাশ প্রতিরক্ষায় অত্যন্ত সীমিত।


ভুটান: ভুটানের নিজস্ব কোনও বিমানবাহিনী নেই। দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা সম্পূর্ণভাবে ভারতের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। ভুটানের কাছে মাত্র দুটি হেলিকপ্টার রয়েছে, যা মূলত প্রশাসনিক ও জরুরি কাজে ব্যবহৃত হয়। এই কারণে ভুটানের আকাশ প্রতিরক্ষা সম্পূর্ণভাবে বহির্ভরশীল, যা কৌশলগত দিক থেকে একটি বড় সীমাবদ্ধতা।